বিয়ের ফাঁদ, অতঃপর টাকা না পেয়ে পুড়িয়ে দেয়া হলো স্বামীর যৌ’নাঙ্গ !!

রাসেল হাসান (২৮) নামে এক যুবককে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ উঠেছে নরসিংদীতে। পরে তা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে অমানসিক নির্যাতন করে যৌনাঙ্গ পুড়িয়ে দেয়া হয়। সেই নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। বিষয়টি নিয়ে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) র‌্যাব-১১ সদর দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রাসেল হাসান। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায়। রাসেল অবসরপ্রাপ্ত এক সরকারি কর্মকর্তার ছেলে।

অভিযোগে রাসেল জানান, ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিবারকে না জানিয়ে মন্টি আক্তার নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন রাসেল। পরে ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যায় রাসেল। বিদেশ গিয়ে বাবা আবদুল হককে বিয়ের কথা জানান তিনি। পরে পুত্রবধূ মন্টিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান রাসেলের মা-বাবা।ভূক্তভোগী যুবকের অভিযোগ, গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ফেরেন রাসেল। এক মাস দেশে থাকার পর মে মাসে আবার সৌদি আরব চলে যান তিনি। সৌদি আরব যাওয়ার পর রাসেলকে তার স্ত্রী মন্টি জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা।

কিন্তু রাসেলের মা-বাবা জানান, মন্টি তাদের না জানিয়ে নরসিংদীতে তার বাবার বাড়ি চলে গেছেন। যাওয়ার সময় গয়না, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন মন্টি। এ খবর পেয়ে রাসেল গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আবার দেশে আসেন। মন্টির বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন, তার গর্ভপাত হয়েছে। এর চার দিন পর নরসিংদী সদর থানায় রাসেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন মন্টি আক্তার।রাসেল অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, ওই মামলার পর নানাভাবে রাসেলকে হয়রানি করতে থাকে মন্টির পরিবার।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাকে ডিবি পরিচয় দিয়ে মন্টির ভাই পাপ্পু মিয়াসহ কয়েক ব্যক্তি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সিটের নিচে ফেলে তাকে মারধর করা হয়। তৃষ্ণায় তিনি পানি চাইলে তাকে সেভেন আপ দেওয়া হয়। কিন্তু সেভেন আপ পানের পর তিনি চেতনা হারিয়ে ফেলেন। চেতনা ফেরার পর দেখেন হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তিনি একটি কক্ষের মেঝেতে পড়ে আছেন। এর কিছুক্ষণ পরই রাসেলকে পেটানো শুরু করেন পাপ্পু।

একপর্যায়ে মারধরের ভিডিও ধারণ করে রাসেলের পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। ওই ভিডিও দেখে দেড় লাখ টাকায় সমঝোতা হয়। রাতে বিকাশে ৬০ হাজার টাকা পাঠায় রাসেলের পরিবার। বাকি ৯০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধের কথা হয়। এই টাকা নিতে ২৯ ডিসেম্বর রাতে রাসেলকে মাইক্রোবাসে তোলেন পাপ্পু ও তার দলের লোকজন।

রাত সাড়ে ৩টার দিকে মাইক্রোবাসটি নরসিংদী শাপলা চত্বরে আসার পর অপহরণকারীরা প্রস্রাব করতে নামেন। রাসেলকেও নামানো হয়। একটি পিকআপ ভ্যান সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় রাসেল চিৎকার শুরু করেন। তখন অপহরণকারীরা তাকে রেখেই দ্রুত পালিয়ে যান।

এরপর রাসেল সারা রাত নরসিংদী রেলস্টেশনে কাটান। পরদিন সকালে কুমিল্লায় বড় বোনের কাছে চলে যান। সেখানে মুক্তি ক্লিনিকে চিকিৎসা করান। এরপর গত বুধবার তিনি র‌্যাব-১১ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে নরসিংদীর বানিয়াছল মালিপাড়া এলাকায় মন্টি আক্তারের বাবা বাদল মিয়ার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তার তিন মেয়ে, দুই ছেলে। এর মধ্যে ছোট ছেলে কারাবন্দী। ভাইরাল হওয়া এক মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, গেঞ্জি ও ফুলপ্যান্ট পরা এক যুবকের দুই হাত কোমরের পেছনে বাঁধা। পা দুটিও হাঁটুর নিচ থেকে বাঁধা। মুখ বাঁধা কালো কাপড়ে। মেঝেতে ফেলে লাঠি দিয়ে ওই যুবকের পায়ের গোড়ালিতে একের পর এক আঘাত করছে এক ব্যক্তি। আর যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করছেন ওই যুবক।

পাশ থেকে মোবাইল ফোন দিয়ে ভিডিও করছেন আরেকজন। দু-তিনবার আঘাতের পর ওই যুবককে বলা হচ্ছে, ‘১০ লাখ টাকা নিয়ে আয়।’ এরপর আবার লাঠির আঘাত। কিছু সময় পর ওই যুবকের মাথা পা দিয়ে চেপে ধরে আবারও লাঠির আঘাত। আবারও বলা হয়, ‘১০ লাখ টাকা নিয়ে আয়।’

এদিকে মন্টির করা ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নরসিংদী সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমরান হাসান বলেন, ‘রাসেলেকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং দুটি মোবাইল ফোনে ধর্ষণের দৃশ্য উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো সিআইডির কাছে পাঠানো হয়েছে। সিআইডির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এসআই ইমরান আরও বলেন, ‘মারধর ও মুক্তিপণের ঘটনা রাসেল হাসান পুলিশকে জানায় নি।’

অভিযোগের বিষয়ে র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বলেন, ‘রাসেল হাসানের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি, এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *