ভারতজুড়ে আরও বড় প্রতিবাদের ডাক রাহুলের !!

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানের পরও দেশটিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ থামেনি। দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ানো বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছে। দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, জয়পুর, উত্তরপ্রদেশ, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন রাজ্যে সোমবারও রাজপথে নামেন বিক্ষুব্ধ জনতা।

দিল্লির রাজঘাটে ধরনায় বসেন বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। এ সময় রাহুল গান্ধী মোদি-অমিত শাহের হটকারী সিদ্ধান্তকে প্রতিহত করে বিতর্কিত আইন বাতিলে বড় প্রতিবাদ গড়ে তুলতে যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দাবাজার পত্রিকা বলছে, কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানী দিল্লিতে সোমবারও প্রতিবাদ হয়েছে। গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে চিকিৎসকরা নামেন রাজপথে। সংঘর্ষের এলাকার হাসপাতালে পুলিশের প্রবেশ নিয়ে আপত্তি তুলেছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।

দিল্লির নিজামুদ্দিনে মুসাফির খানা পার্কে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ’ মানুষ। বাইরে মোতায়েন ছিলেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে প্রতিবাদ সভায় যোগ দেন সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। জয়পুরে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের ‘সংবিধান বাঁচাও’ মিছিলে যোগ দেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।

সিপিআই, সিপিএম, আপ, এসপি, আরএলডি, সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধিরাও প্রায় তিন কিলোমিটারের এ মৌন মিছিলে হাঁটেন। ছাত্র-যুবদের শান্তিপূর্ণ মিছিল হয় পুনেতেও। তামিলনাড়ুর চেন্নাই ও মাদুরাইতে বড় বিক্ষোভ হয়। কলকাতা, শিলিগুড়ি, জয়পুর, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়। বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য ছাড়াও ড্রোন ক্যামেরা, দাঙ্গাবিরোধী গাড়ি, সুইফট অ্যাকশন গ্রুপের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

মধ্যপ্রদেশের কিছু এলাকায় সাময়িকভাবে কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছে। তবে সোমবার নতুন করে কারফিউ জারি হয়েছে রাজ্যের জব্বলপুরে। লখনৌসহ উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় এদিন কিছুটা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখা যায়।

নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ মোকাবেলা নিয়ে বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, কর্নাটকের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যের পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মারধর করে বিক্ষোভকারীদের উত্তেজিত, পাথর ছোড়া, গাড়ি ভাংচুর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, হাসপাতালে ভাংচুরের মতো অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ভিডিওফুটেজেও এসবের প্রমাণ মিলেছে।

এনডিটিভি ও রয়টার্স জানায়, দিল্লির রাজঘাটে সোমবার বিকালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে দেশটির ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। এদিন ধরনায় বসেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াংকা গান্ধী।

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ছাড়াও কমলনাথ, কপিল সিব্বল, গুলাম নবি আজাদের মতো জ্যেষ্ঠ কংগ্রেস নেতারাও এতে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে দেশের সংবিধানের মুখবন্ধ পাঠ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী।

এরপর রাহুল গান্ধী ও মনমোহন সিংও পাঠ করেন সংবিধানের প্রস্তাবনা। কংগ্রেস নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, প্রতিটি দলেরই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে পথে নামা উচিত। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, কোনো অবস্থাতেই নিজেদের রাজ্যে এ আইন কার্যকর করবেন না তারা।

এর আগে এক টুইটে রাহুল বলেন, দেশের প্রিয় ছাত্র ও যুবরা, শুধু ভারতীয় হিসেবে অনুভব করাটাই যথেষ্ট নয়। এমন সময়গুলোতে আপনি যে ভারতীয় এটা দেখানো এবং ভারতকে ধ্বংস হতে দেখাটা কঠিন। মোদি-শাহ যে ঘৃণা ও হিংসার পরিবেশ তৈরি করেছে, তার বিরোধিতা করুন। রাহুলের বোন ও কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধীও ভারতীয় নাগরিকদের প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

এদিকে সোমবার ক্ষমতাসীন বিজেপি ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। চিঠিতে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) ঠেকাতে একজোট হয়ে আন্দোলনের আহ্বান জানান তিনি। ইতিমধ্যে অনেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই বিতর্কিত আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। এমনকি বিজেপির জোটসঙ্গীরাও দলটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *