ভয় না পেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা মমতার !!
কেন্দ্রীয় সরকার তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার আশঙ্কা সত্ত্বেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের ডাকা তিনদিনের শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে বুধবার ধর্মতলায় এক সমাবেশে এ ঘোষণা দেন তিনি। পদ হারানোর ভয় থাকলেও তিনি আন্দোলন পিছু হটবেন না।
‘বিজেপি হঠাও’ স্লোগানে মুখর হাওড়া ময়দান। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বুধবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কলকাতার ডালহৌসি থেকে পদযাত্রা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে এসে পদযাত্রাটি শেষ হয়।
এ সময় ধর্মতলায় সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে, বিজেপির ধর্মভিত্তিক রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেন মমতা। অন্যান্য রাজ্যে সহিংস আন্দোলন হলেও পশ্চিমবঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তৃণমূল সভানেত্রী। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার রানি রাসমনি রোডে গণজমায়েতের ডাক দিয়ে শিক্ষার্থীদের এতে সামিল হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলে বাধ্য করা হবে বলেও ঘোষণা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, পাকিস্তানের নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, জৈন, খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান রেখে গত সপ্তাহে রাজ্যসভায় পাস বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি। এরপর থেকেই উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোসহ দেশজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ করে আসছে দেশটির সাধারণ মানুষ।
কেন্দ্রীয় সরকার নতুন যে নাগরিকত্ব আইন করেছে তা পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর করা হবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন রাজ্যটির মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার কোনো আইন করলে রাজ্য সরকার সেই আইন মানতে বাধ্য। এক্ষেত্রে আইন না মানা রাজ্যে কার্যত ভারতীয় সংবিধান অকার্যকর। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধানের ৩৫৬ ধারা বলে মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হতে পারে।
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক অ্যাডভোকেট জেনারেল, আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্ব কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয়। সে বিষয়ে কেন্দ্র যদি কোনও আইন আনে তবে রাজ্যকে তা মানতেই হবে।’
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী দীপন সরকার বলেন,‘সংবিধানের ২৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে দেয়া রয়েছে, সংসদে প্রণীত আইন মেনে চলতে হবে রাজ্যকে। এমনকি রাজ্যকে সেই আইন মানার সরাসরি নির্দেশও দিতে পারে কেন্দ্র।’
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন,‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারিভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোষণা করছেন যে তিনি সিএএ মানবেন না। এটা ২৫৬ ধারার বিরুদ্ধে।’
অমল মুখোপাধ্যায় মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী। সংবিধানে খুব পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা রয়েছে, ২৫৬ ধারা অনুযায়ী যদি কেন্দ্রের নির্দেশ না মেনে নেয় রাজ্য এবং ওই কেন্দ্রীয় আইন না মানে, তাহলে ধরে নেওয়া হবে ওই রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা চলছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থার কারণে কেন্দ্র সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির শাসন ঘোষণা করতে পারে।’