মনে আছে সেই মায়ের কথা?? সন্তানের কাছে নিতে বাধ্য করলো পুলিশ !!

মনে আছে কয়েকদিন আগের সেই নিউজের কথা ? সিরাজুল সালেকীনের “বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যুর অপেক্ষায় মা, লাশের অপেক্ষা ছেলেদের” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল বিডি২৪লাইভ এ। সেই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল এক অসহায় বৃদ্ধ মায়ের করুন আকুতি, চাহুনির কথা। শেষ বারের মত সন্তানদের দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। বিডি২৪লাইভে সেই সংবাদ প্রকাশের পর বৃদ্ধা মাকে ছেলের বাসায় ফিরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর মিডিয়া বিভাগে। হেড কোয়ার্টারের নির্দেশনায় কামরাঙ্গীরচর থানার অফিসার ইনচার্জ এবিএম মশিউর রহমান পিপিএম বৃদ্ধার আত্মীয় স্বজনদের খুঁজে বৃদ্ধাকে পরিবারের সাথে থাকার ব্যবস্থা করেন। রোববার বৃদ্ধা মা আম্বিয়া খাতুন উঠেন ছেলের বাসায়।

কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি এবিএম মশিউর রহমান পিপিএম জানান, পত্রিকার রিপোর্টে নাম ঠিকানা কোন কিছু না থাকায় বৃদ্ধার আত্মীয় স্বজনদের খুঁজতে একটু সমস্যা হয়। মিরপুর পাইকপাড়ার সেই বৃদ্ধাশ্রমকে প্রথমে খুঁজে বের করি। বৃদ্ধাশ্রমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বৃদ্ধা মহিলার কোন আত্মীয়ের ঠিকানা চাই। কিন্তু তারা কোন নাম ঠিকানা দিতে পারেন না। পরে বিভিন্ন সময় মোবাইলে বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে যেসব নাম্বারে কথা বলা হয়েছে তা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তী সময়ে নাগরিক তথ্য ড্যাটা বেজের সাহায্যে বৃদ্ধা মহিলার ছেলে আলাউদ্দিন এর ঠিকানা সংগ্রহ করে তার সাথে কথা বলে তাকে বুঝাই। সেই বুঝ মানলে তাকেসহ চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে যেয়ে সেখান থেকে বৃদ্ধা আম্বিয়াকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উল্লেখ্য, সন্তানদের সঙ্গে থাকতেন আম্বিয়া খাতুন। পাঁচ বছর আগে পড়ে গিয়ে ডান হাত ভাঙে এই বৃদ্ধার। হারিয়ে ফেলেন চলাফেরার শক্তি। হয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন। এরপর সন্তানদের কাছে অচ্ছুত হয়ে যান এই মা। এক নাতনী তাকে গোপনে রেখে যান মিরপুরের একটি বৃদ্ধাশ্রমে। সেখানেই কোনও ভাবে দিন কাটছিল তার। বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই এই নারীর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের খোঁজ বের করে যোগাযোগ করেন সন্তানদের সঙ্গে। গত মঙ্গলবার বৃদ্ধার এক ছেলেকে তারা জানান মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন। নিয়ে ভালো মতো চিকিৎসা করান।

আম্বিয়ার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে নিজেদের বাড়িতে। তারা মাকে নিয়ে যেতে রাজি নন। বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষকে এক ছেলে বলেন, ‘মা, মারা গেলে জানাবেন, লাশ নিয়ে যাবো।’ আর এক পুত্রবধূ গত মঙ্গলবার মিরপুরের পাইকপাড়ার চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী মিলটন সমাদ্দারকে ফোন করে বলেন, ‘আবার যদি আমার শাশুড়িকে নিতে ফোন করেন, তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আমার শাশুড়িকে অপহরণের মামলা করবো।’

সংকটাপন্ন আম্বিয়া খাতুনকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মিলটন সমাদ্দার। গত পাঁচ বছর ধরে বৃদ্ধাশ্রমটির নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। তবে তার পরিবারের এমন হুমকিতে তিনি এযাবতকালে এমন ঘটনার মুখোমুখি হননি। মিলটন সমাদ্দার বলেন, ‘ডান হাত ভাঙ্গা এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ আম্বিয়াকে ২০১৮ সালে আমাদের এখানে রেখে যাওয়া হয়। পরে জানতে পারি রেখে যাওয়া নারীরা ছিলেন বৃদ্ধার নাতনী। ছয়মাস পর সন্তানরা মাকে দেখতে এসেছিলেন। সেসময় তাকে নিয়ে যেতে বলা হলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে।’

তিনি জানান, কিছুটা সুস্থ হলে মাকে নিয়ে যাবেন বলেন আশ্বাস দিয়েছিলেন সন্তানরা। কিন্তু এরপর তারা কোনও রকম যোগাযোগ করেননি। মিলটন বলেন, ‘বর্তমানে বৃদ্ধা আম্বিয়া খুবই অসুস্থ। মৃত্যুর কাছাকাছি অবস্থান করছেন। সুচিকিৎসা দেয়া হলে হয়ত একটু সুস্থ হতেন। বিষয়টি সন্তানদের জানিয়েছি। বারবার ফোন করা হলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তারা আসতে চাননি।’ ‘বুধবার ভোরে পরে দুই ছেলে, ছেলের বউসহ পাঁচজন এসেছিলেন। আমরা বেশ কয়েকবার বলেছি তাদের মাকে নিয়ে যেতে। তারা রাজি হননি। উল্টো যাওয়ার সময় বলে গেছেন মা মারা গেলে আমরা যেন তাদের খবর দিই। তারা এসে মরদেহ নিয়ে যাবেন।’

এ প্রতিবেদক বিষয়টির অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে পরিচয় গোপন রেখে আম্বিয়াকে তারই এক নাতনী ওই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে যান। তার ছয়মাস পর দুই ছেলে ও নাতনীরা এসে বৃদ্ধা আম্বিয়ার একবার খোঁজ নেন এবং তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করেন। এরপর থেকে তারা বৃদ্ধাশ্রমে ওই নারীর আর কোনও খোঁজখবর নেননি।

বৃদ্ধাশ্রমের লোকজন বলছেন, সন্তানদের এমন অবহেলার পরও পরিবারের প্রতি টান একটুও কমেনি বৃদ্ধা আম্বিয়ার। বারংবার ছেলে মেয়েদের নাতি-নাতনিদের দেখার আকুতি জানান তিনি। এরপর বৃদ্ধাশ্রম থেকে তার পরিবারের বারবার খবর দেয়া হলেও উল্টো তারা বিরুপ আচরণ দেখান।

সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *