Islamic

মহানবীর অপরাধীদের প্রতি যেমন আচরণ করতেন !!

রাসুলুল্লাহ (সা.) দয়া, অনুগ্রহ ও ভালোবাসার নবী। তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেন, ‘আমি ক্ষমা ও দয়ার নবী।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৫৫) আর কোরআনে মহানবী (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্য নবী রাসুল এসেছেন।

তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাকে কষ্ট দেয়, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী এবং মুমিনদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দয়া ও কল্যাণকামিতা ছিল সব মানুষের জন্য। তাঁর দয়া, অনুগ্রহ ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতো না সমাজের অপরাধীরাও; বরং তাদের প্রতি ছিল তাঁর বিশেষ মমত্ব ও কল্যাণকামিতা। কারো ভেতর কোনো অপরাধপ্রবণতা দেখা দিলে তিনি প্রথমেই তা সংশোধনের চেষ্টা করতেন।

যুক্তি দিয়ে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। বেশির ভাগ সময় কারণ ব্যাখ্যা করতেন। আবার অপরাধ প্রমাণিত হলে যথোপযুক্ত শাস্তি প্রয়োগ করতেন। যেন তা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত না হয়।

পাপ থেকে সতর্কীকরণ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) আমার শরীরে দুটি জাফরান রঙের কাপড় দেখলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা কি তোমাকে এই দুটি পরার নির্দেশ দিয়েছেন? আমি বললাম, আমি কি কাপড় দুটি ধুয়ে দেব? রাসুল (সা.) বললেন, বরং তুমি তা পুড়িয়ে ফেলো। কেননা এটি অবিশ্বাসীদের পোশাক। তুমি পরিধান কোরো না।’ (রিয়াদুস সালিহিন, হাদিস : ২৮৯)

অপরাধপ্রবণতা দূর করতে মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসা
অপরাধপ্রবণতা কমাতে মনস্তাত্ত্বিক চিকিত্সার কথা বলে আধুনিক অপরাধ বিজ্ঞান। রাসুলুল্লাহ (সা.) অপরাধপ্রবণতা দূর করতে এই পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি এমনভাবে অপরাধের স্বরূপ উন্মোচন করতেন যে মানুষের অপরাধস্পৃহা দূর হয়ে যেত। যেমন—এক যুবক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে ব্যভিচারের অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, তোমার মা, মেয়ে, বোন, ফুফি ও খালার সঙ্গে কেউ এমন করুক এটা কি তুমি পছন্দ করবে? সে বলল, না, এটা কেউ পছন্দ করবে না। তখন রাসুল (সা.) তাকে বললেন, মানুষও তার আপনজনের সঙ্গে ব্যভিচার পছন্দ করে না। অতঃপর তিনি তার পাপমুক্তি ও আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য দোয়া করলেন। (মুসনাদে আহমদ : ৫/২৫৬)

অপরাধীর আত্মসম্মানে আঘাত নয়
রাসুল (সা.)-এর সময়ে কেউ কোনো অপরাধ করলে তিনি তার নাম উল্লেখ না করেই মানুষকে সতর্ক করতেন, যেন অপরাধীর আত্মসম্মানে আঘাত না লাগে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে যখন তাঁর কোনো সাহাবির ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পৌঁছাত, তখন তিনি বলতেন না অমুকের কী হলো; বরং তিনি বলতেন, মানুষের কী হলো তারা এমন কাজ করে!’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৮)

অপরাধকর্মের প্রচারণা অনুচিত
মহানবী (সা.) সামাজিকভাবে অপরাধীর দোষ-ত্রুটি ও অপরাধের প্রচার নিষিদ্ধ করেছেন। যেন ওই ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসার সুযোগ পায়। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দোষ গোপন করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন করবেন। আর যে তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দোষ প্রকাশ করে দেবে, আল্লাহ তার দোষ প্রকাশ করে দেবেন; এমনকি তাকে নিজ ঘরে অপমানিত করবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৫৪৬)

ইসলামী আইনজ্ঞদের মতে, ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে যদি অন্য কারো অধিকার, সামাজিক শৃঙ্খলা ও অবক্ষয়, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ জড়িত না থাকে তখন তার অপরাধ গোপন করা যাবে। নতুবা তা প্রকাশ করে দিতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ মন্দ কথার প্রচারণা পছন্দ করেন না। কিন্তু যার ওপর জুলুম করা হয়েছে সে ছাড়া। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪৮)

সংশোধনের সুযোগ দেওয়া
কেউ অপরাধ করলে তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাকে আত্মসংশোধনের সুযোগ দিতে বলেছেন। ইসলামী শরিয়তে শাস্তির যে বিধান রয়েছে তার মূল উদ্দেশ্যও ব্যক্তির আত্মসংশোধন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো দাসী (অবিবাহিত) ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং তা প্রমাণিত হয়, তখন তাকে দোররা মেরে তাকে শাস্তি দাও।

কিন্তু তাকে ভর্ত্সনা কোরো না। যদি সে আবারও ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয়, তবে তাকে দোররা মেরে শাস্তি দাও। কিন্তু তাকে ভর্ত্সনা কোরো না। তার পরও যদি সে ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে বিক্রি করে দাও একটি রশির বিনিময়ে হলেও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২২৩৪)

অপরাধীরাও মৌলিক মানবাধিকার পাবে
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত উল্লিখিত হাদিস দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয় যে কোনো ব্যক্তি অপরাধী প্রমাণিত হলেও সে মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। একটি অপরাধের দায়ে ব্যক্তিকে আজীবন ভর্ত্সনা ও অপমান করা যাবে না। নতুবা রাসুলুল্লাহ (সা.) দাসীকে ভর্ত্সনা করতে নিষেধ করতেন না।

ক্ষমার ব্যাপারে আশান্বিত করা
মনুষ্যত্বের কারণে মানুষ অপরাধ করার পর আত্মগ্লানিতে ভোগে। রাসুলুল্লাহ (সা.) অপরাধীকে আত্মগ্লানি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতি আশান্বিত করতেন। আবদুর রহমান ইবনে জোবায়ের (রা.) আবু তুয়াইল শাতাব আল মামদুদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি সেই ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলেন, যে সব ধরনের পাপ করেছে।

কোনো পাপই সে ছাড়েনি; ছোট-বড় সব পাপই সে করেছে। তার এত পাপের মার্জনা আছে? রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করেছ? তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল। মহানবী (সা.) বললেন, ভালো কাজ করো, পাপ পরিহার করো, আল্লাহ তোমার পাপকে পুণ্যে পরিণত করবেন। আবু তুয়াইল (রা.) বললেন, আমরা বিশ্বাসঘাতকতা ও পাপাচারও? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ! আল্লাহ মহান। কোনো কিছু তাঁর সীমার ঊর্ধ্বে নয়।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ৭২৩৫)

কল্যাণের জন্য শাস্তি প্রদান
মহানবী (সা.) অপরাধীদের মানবিক অধিকার ও উত্তম জীবন কামনা করলেও সার্বিক কল্যাণের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর ছিলেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি কাউকে ছাড় দিতেন না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের আগে যারা ধ্বংস হয়েছে, তাদের মধ্যে যখন কোনো অভিজাত ব্যক্তি চুরি করত, তারা তাদের ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে দুর্বল কেউ চুরি করত, তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আল্লাহর শপথ! যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করে আমি তার হাত কেটে দেব।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৪৭৫)

অপরাধীদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আচরণ ছিল অত্যন্ত মানবিক, ন্যায়সংগত ও কল্যাণের ধারক-বাহক। ঠিক যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে আপনি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছেন। যদি আপনি কঠোর হৃদয় ও রূঢ় আচরণকারী হতেন, তবে তারা আপনার পাশ থেকে সরে যেত। আপনি তাদের ক্ষমা করুন। তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।… ’ (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button