মায়ের জন্মদিনে কেক বানালেন ছেলে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাটলেন চিকিৎসক মা !!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেফরোলজি বিভাগের চিকিৎসক সাবরিনা শাহরিন। হাসপাতালটিতে সম্প্রতি চালু হওয়া করোনা ইউনিটে তিনি ১৬ মে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। এজন্য নিয়ম মেনে বাসায় যেতে পারছেন না। হাসপাতালের দায়িত্ব পালন শেষে লা ভিঞ্চি হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে তাকে। বুধবার (২০ মে) তার জন্মদিন হওয়ায় ১১ বছরের ছেলে ‘নিস্বর্গ’ বাসা থেকেই মায়ের জন্য কেক তৈরি করে এনেছিল ওই হোটেলে। এক পর্যায়ে তিনি নিজের জন্মদিনের কেকটি কাটলেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে জন্মদিনের কেকটি হাতে নিয়েই কাটলেন তিনি। সামনেই গাড়ির ভেতরে জানালার গ্লাসে একমাত্র শিশু সন্তান নিস্বর্গের চোখ। কেক কাটতে কাটতে চিকিৎসক মায়ের চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছিল, গাড়ির গ্লাসের ওপাশে সন্তানের চোখেও পানি। কেউ কাউকেই জড়িয়ে ধরতে পারছিলেন না!

দীর্ঘদিন পর মায়ের দেখা পেলেও সেই একই আতঙ্কে সন্তান মায়ের মুখে কেক তুলে দিতে পারেনি। অপরদিকে, একমাত্র সন্তানের আহবানে চিকিৎসক মা হোটেল কক্ষ থেকে নিচে আসলেও তার মুখে মাস্ক। নিস্বর্গের বাবা তৌহিদ মুন্সীও চিকিৎসক। তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্টার। বাবার সাথেই মায়ের জন্মদিনের কেক নিয়ে এসেছিল সন্তান। চিকিৎসক তৌহিদ মুন্সী জানান, করোনা ইউনিটে দায়িত্বের কারণে নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রী বাসায় ফিরতে পারছে না। তিনি নিজেও সারাদিন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরে সন্তানের কাছে যেতে ভয়ে পান। ছেলেটা অনেকটা একা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সন্তান তার মায়ের জন্মদিনটার কথা ভুলেনি। তাই বুধবার হাসপাতালের দায়িত্ব পালন শেষে বাসায় ফিরতেই মায়ের কাছে কেক নিয়ে যাওয়ার বায়না ধরে ছেলে। কোনো বেকারি খোলা না পেয়ে বাপ-বেটা বাসাতেই লেগে যান কেক তৈরির কাজে।

শেষ পর্যন্ত কেকের মতো কিছু একটা তৈরি করে ইফতারের পর ছেলেকে নিয়ে চলে যান স্ত্রীর হোটেলের সামনে। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী সেই কেক কাটলেও বাস্তবতার কারণে কেউ কারো মুখে তুলে দিতে পারেননি। চিকিৎসক তৌহিদ মুন্সী জানালেন, মা ছাড়াই নিস্বর্গের এবার ঈদ কাটাতে হবে। হয়তো ওর মন খারাপ হবে। কিন্তু বড় হয়ে ও যখন বুঝবে এক মহামারীতে তার মা দেশের স্বার্থে, মানুষের সেবায় অজানা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়ায় মা তাকে ঈদে স্নেহ দিতে পারেনি, তখন হয়তো ছেলে তা নিয়ে গর্বই করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *