মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আইসিসির অনুমতি !!

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনা তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকরা এ অনুমোদন দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার আইসিসির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানোর দায়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আর্জেন্টিনায়।

আইসিসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা বিশ্বাস করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে যে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে এবং পদ্ধতিগত সহিংস কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়ে থাকতে পারে, যা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত পাড়ির পেছনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকতে পারে। চেম্বার তাই বাংলাদেশ/মিয়ানমারের পরিস্থিতি তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে।

গত বছর সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের এ আদালতের রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত আসার পর প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়।

চলতি বছরের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রাথমিক তদন্ত শেষে পূর্ণ তদন্ত শুরুর জন্য আইসিসির কৌঁসুলি ফাতৌ বেনসুদা আবেদন করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারকরা তদন্তের অনুমতি দিলেন। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংতার অভিযোগের তদন্তে এটাই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্যোগ। আইসিসি বলেছে, পূর্ণ তদন্তের পর কৌঁসুলিরা এক বা একাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চাইতে পারবেন। চেম্বার সেটি বিবেচনা করে পরবর্তী রায় দেবে। তদন্তকালে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে পূর্ণ সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে আইসিসি।

এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানোর দায়ে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে আর্জেন্টিনায়। একাধিক রোহিঙ্গা ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন বুধবার আর্জেন্টিনার ‘সর্বজনীন এখতিয়ার’র আওতায় এক মামলা করে। সু চির সঙ্গে এ মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় রয়েছেন মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। আর্জেন্টিনাসহ বিশ্বের অল্প কয়েকটি দেশে অন্য দেশের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা করা যায়।

মামলাকারীদের পক্ষের আইনজীবী টমাস ওজেয়া বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়া আর্জেন্টিনায় করছি, কারণ অন্য কোথাও এ মুহূর্তে এমন অভিযোগ দায়ের করা সম্ভব নয়। ওজেয়া আশাবাদী, এ মামলার ফলে শিগগিরই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করবে আর্জেন্টিনা কর্তৃপক্ষ।

ওজেয়া ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি কিভাবে রোহিঙ্গারা রয়েছেন। এখন সময় এসেছে বিচার চাওয়ার।

এ মামলার সঙ্গে জড়িত দুটি মানবাধিকার সংস্থা আবুয়েলাস দে প্লাজা দে মায়ো এবং ফুন্দাসিওন সের্ভিসিও পাজ ই জুস্টিসিয়া। তাদের সাহায্যেই লাতিন আমেরিকায় হাজার হাজার মানুষের গুম হওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার কাজ শুরু ও বিচার প্রক্রিয়া সম্ভব হয়।

এছাড়া সোমবার হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে গাম্বিয়া। ওআইসির (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন) পক্ষ থেকে মামলাটি করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। এর কয়েক মাসের মধ্যে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাদের কথায় ওঠে আসে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে।

জাতিসংঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টার সমতুল্য।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *