মৃ’ত্যু’র আগে আপনজনদের কাছে পানি চেয়েও পাননি সাহাবউদ্দিন !!
Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/bn.ekusherbangladesh.com.bd/public_html/wp-content/plugins/one-user-avatar/includes/class-wp-user-avatar-functions.php on line 798
Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/bn.ekusherbangladesh.com.bd/public_html/wp-content/plugins/one-user-avatar/includes/class-wp-user-avatar-functions.php on line 798

ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভা’ইরাস সং’ক্রম’ণের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বদ্ধ ঘরে মৃ’ত্যু হওয়া সাহাব উদ্দিনের (৫৫) মৃ’ত্যু’র পূর্বে বীভৎস চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মৃ’ত্যু’র আগে পরিবারের লোকজন তাঁকে ঘরে একা রেখে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাখে।দেওয়া হয়নি দুপুরে খাবার। মৃ’ত্যু’র সময় পানি চেয়েও পায়নি। মৃ’ত্যু’র পরও কাছে আসেননি স্ত্রী, ছেলে–মেয়ে ও জামাতাসহ কোন স্বজন। মৃ’ত্যু’র পর পায়নি স্থানীয় মসজিদের খাটিয়া, কেউ দেয়নি কবর খোঁড়ার কোদালও।
মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রবিউজ্জামান মৃ’ত সাহাব উদ্দিনের ছোট ছেলের বরাত দিয়ে জানান, রোববার হাসপাতালে গিয়ে কোভিড–১৯ আ’ক্রান্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। দুপুরে বাড়িতে আসলে পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন। এসময় তাঁকে শয়নকক্ষে রেখে বাইরে থেকে দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে রাখেন পরিবারের সদস্যরা।
এর পর থেকে পরিবারের কেউ সাহাব উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেননি। দুপুরে তাঁকে খাবারও দেননি। বিকেলে তাঁর শ্বা’সক’ষ্ট ও কাশি বেড়ে যায়। এ সময় তিনি চিৎকার করে খাবার চাইলেও কেউ দেননি। ছোট ছেলে এগিয়ে যেতে চাইলে তাঁকে বোনেরা বাধা দেন। এভাবে চিৎকার করতে করতে রাত ১০টার দিকে সাহাব উদ্দিনের মৃ’ত্যু হয়। রাতে সাড়াশব্দ না পেয়ে পরিবারের লোকজন জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি মা’রা গেছেন। এরপর সবাই যাঁর যাঁর ঘরের দরজা বন্ধ করে ভেতরে ঢুকে যান। পরে ছোট ছেলে ‘বাবা মারা গেছে’ বলে চিৎকার শুরু করেন।
মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ফেরদৌস রাসেল বলেন, ‘সাহাব উদ্দিনের বাড়ি থেকে চিৎকারের শব্দ শোনার বিষয়টি একজন প্রতিবেশী চেয়ারম্যানকে জানান। পরে রাত একটার দিকে গ্রামপুলিশ নিয়ে চেয়ারম্যান সহ আমরা কয়েকজন ওই বাসায় গিয়ে উপস্থিত হই। অনেক ডাকাডাকির পর ওই বাড়ির লোকজন মূল দরজা খুলে দিয়ে যাঁর যাঁর কক্ষে চলে যান। বাড়ির একটি কক্ষে সাহাব উদ্দিনকে রেখে বাইরে থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল। ছিটকিনি খুলে আমরা ভেতরে বীভৎস দৃশ্য দেখতে পাই। সম্ভবত সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট উঠেছিল এবং তিনি তা সহ্য করতে না পেরে মাটিতে গড়াগড়ি করেছিলেন। তাঁর পরনের কাপড় খোলা অবস্থায় পাশে পড়েছিল।’
ইসলামী আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমের এক সদস্য জানান, দাফন জন্য মধ্যরাতে ইসলামী আন্দোলনের করোনা রোগে দাফন টিমকে খবর দেন চেয়ারম্যান। দাফন টিমের সদস্যদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পিপিই (পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইক্যুইপমেন্ট) ও থানা থেকে ম’র’দেহ রাখার জন্য একটি ব্যাগ সংগ্রহ করে দেন। লা’শ দাফন করার জন্য স্থানীয় মসজিদ থেকে খাটিয়া আনতে লোক পাঠালে মসজিদ কমিটির লোকজন খাটিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানান ও কবর দিতে বাধা দেন। কবর খোঁড়ার কোদালও দিচ্ছেন না কেউ। মরদেহ গোসল করানোর জন্য সমাজের পর্দাও না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সমাজপতিরা। পরে চেয়রাম্যান নিজের টাকায় কাপনের কাপড় কিনে, সমাজপতি, গ্রামের লোকদের অনেকটা বুঝিয়ে খাট ও পর্দার কাপড়, কোদাল সংগ্রহ করেন।
গ্রাম পুলিশ ও ইসলামী আন্দোলনের লোকদের সাথে নিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে মৃ’ত ব্যক্তির লা’শ দাফন করেন চেয়ারম্যান। কবর খোঁড়া, জানাজা ও দাফন কাজে অংশ নেন চেয়ারম্যান সহ ৭জন ব্যক্তি। দাফন করে চলে আসার সময় ছোট ছেলেটি তার বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
ইউপি চেয়ারম্যান রবিউজ্জামান জানান, মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভাদাদিয়া এলাকার বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে একটি পেট্রলপাম্পে চাকরি করতেন। কিছুদিন আগে সাহাব উদ্দিনের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। একই সঙ্গে জ্বর ও কাশি ছিল। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে যান। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে বাড়িতে আসেন। গত শনিবার রাত থেকে তাঁর শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি বেড়ে যায়। এর পরদিন রোববার সকালে তিনি হাসপাতালে গিয়ে কোভিড–১৯ আ’ক্রা’ন্ত কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে আসেন। সাহাব উদ্দিনের স্ত্রী, তিন ছেলে, তিন মেয়ে ও তিন জামাতা রয়েছেন। দুই ছেলে কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। মৃ’ত্যু’র সময় বাকিরা সবাই বাড়িতে ছিলেন।
এদিকে এ ব্যাপারে সাহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কেউ কথা বলতে চাননি।চেয়ারম্যান আরো জানান, সাহাব উদ্দিন পেট্রোল পাম্পে কর্মরত থেকে চার ভাইকে প্রবাসে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনটি মেয়ে বিয়ে দিয়ে জামাইদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিজেও বহু অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। টাকা পয়সা রোজগার করে সারা জীবনের উপার্জন দিয়ে পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। অথচ মহান আল্লাহ তার এমন একটি মৃ’ত্যু দিয়েছেন শেষ বিদায়ে কোন স্বজন তার পাশে নেই। এর চেয়ে হৃদয় বিদারক আর কি হতে পারে? মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি কোন শত্রুকেও যেন তিনি এমন মৃ’ত্যু না দেন। এই মৃ’ত্যু থেকে পৃথিবীর সব মানুষ শিক্ষা নেয়া উচিৎ। আসলে কার জন্য এই উপার্জন আর অর্থবিত্ত রেখে যাওয়া? করোনার এই ম’হামা’রিতে মানবতাও যেন আজ থমকে গেছে!
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা উৎপল দাস বলেন, রোববার সকালে সাহাব উদ্দিন নিজেই হাসপাতালে এসে নমুনা দিয়ে যান। তিনি জানান, সোনাগাজী উপজেলায় এ পর্যন্ত দুই চিকিৎসকসহ ২১ জন কোভিড–১৯–এ আ’ক্রা’ন্ত হয়েছেন। মতিগঞ্জ ইউনিয়ন করোনাভা’ইরাস সং’ক্রম’ণের উপসর্গ নিয়ে দুজনের মৃ’ত্যু হয়েছে।