যেভাবে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে মার্কিন সেনারা রক্ষা পান !!

হামলা চালানোর আগে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতেই হয়তো ভেবেচিন্তে ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তেহরানের জন্য যা সোলেইমানির মৃত্যুতে ন্যুনতম করনীয় হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মহল। আবার যুদ্ধের কিনারে গিয়ে ঠেকলেও দুই পক্ষকে সেই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সুযোগ এনেও দিয়েছে এই হামলা।

যদিও গত সপ্তাহে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রতিশোধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন, মঙ্গলবার বিকালে তারা জানতে পারেন– ইরাকের মার্কিন স্থাপনায় হামলা করতে যাচ্ছে ইরান। কিন্তু কোন কোন স্থাপনা তারা লক্ষ্যবস্তু বানাবেন, তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তারা জানান, গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রথম হুশিয়ারিগুলো আসে। এছাড়া ইরাকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও জানা যায় যে ইরান হামলা চালাতে ইচ্ছুক।

এদিকে প্রাণহানি এড়াতে ইরাকিদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে যে দাবি করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা জানতাম, ইরাকিরা আমাদের আক্রমণ করতে যাচ্ছে। এই তথ্য কয়েক ঘণ্টা আগেই আসছিল। তবে অন্যরা এসব গুরুত্বহীন বলে দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যদি ইরাকিরা সতর্কবার্তা দিতেন, তবে এটা নিশ্চিতভাবে কয়েক ঘণ্টা আগে হওয়ার কথা না। অন্যদিকে পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একটি কক্ষ জড়ো হন। এরপরেই জানতে পারেন, হামলা আসছে। জানা যায়, মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক এ. মিল্লি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক টি. এসপার।

হামলা হবে কিছুক্ষণের ভেতরেই- এমন তথ্য পাওয়ায় মার্ক এসপার বৈঠক থেকে উঠে চলে যান। সেখানে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল। আগাম প্রতিবেদনে কোনো হতাহতের কথা বলা হয়নি। কাজেই প্রথম দফা শেষে কিছুটা আশাবাদ দেখা গেছে। তবে আগাম তথ্যে মার্কিন বাহিনীকে নিরাপদ সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় পেয়েছিলেন কমান্ডাররা। সামরিক কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, সুরক্ষা পোশাক পরে সেনাদের বাংকারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল। হামলার পরেও বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে তারা সেই স্থানে ছিলেন। আরেক কর্মকর্তা জানান, হামলার আগে অনেকে আল-আসাদ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে পশ্চিম ইরাকে চলে যান। উত্তর ইরাকের ইরবিলে একটি সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি আল-আসাদে হামলা চালানো হয়েছে। এদের ভেতর একজন দাবি করেন, তারা (মার্কিন সৈন্য) কপাল গুণে বেঁচে গেছেন, বিষয়টা এমন না। ভাগ্য সবসময় একটা ভূমিকা রাখে। কিন্তু স্থলের সামরিক কমান্ডাররা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভালো সাড়া দিয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, জীবন না খোয়ানোর জন্য আগাম সতর্ক ব্যবস্থাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরবর্তী সময়ে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বললেন, সেনাবাহিনীর রাডার নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট। এই ব্যবস্থায় শত্রুদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্রের খোঁজ বের করে দেয়।

এদিকে প্রকৌশল মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় হুশিয়ারি আসার কথা জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। মার্কিন সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা দিয়ে শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরেই তা শনাক্ত করা সম্ভব। হামলা হওয়ার পরপরেই মিত্রদের সতর্ক করে দেন মার্কিন কর্মকর্তারা। পেন্টাগনে সাংবাদিকদের এসপার বলেন, ইরান সর্বমোট ১৬টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এরমধ্যে ১১টি আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে গিয়ে পড়েছে। ইরবিলেও একটি আঘাত হেনেছে বলে তিনি জানান। তবে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সেটি মার্কিন কনস্যুলেট ও একটি স্থাপনার মাঝের খালি জায়গায় গিয়ে পড়েছে। কিন্তু বাকি চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *