দেশের খবর

যেভাবে র‌্যাবের জালে আটকা পরে সিরিয়াল র‌্যা’পিস্ট মজনু !!

কুর্মিটোলায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধ’র্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। আগেও সে একাধিক নারীকে ধ’র্ষণ করেছে। ভিক্ষুক নারী, প্রতিবন্ধী মেয়েরাও তার আগ্রাসী ছোবল থেকে রেহায় পায়নি। জোরজবরদস্তি করে সে একের পর এক নারীকে ধ’র্ষণ করেছে। যাদের অধিকাংশ গরিব অসহায় পরিবারের নারী। যার কারণে ওই ঘটনাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কেউই জানতো না। তবে ঢাবি’র ওই শিক্ষার্থীকে ধ’র্ষণ করে সে আর রেহায় পায়নি। স্পর্শকাতর এই বিষয়টি যখন সারা দেশের মানুষকে নাড়া দেয় এবং বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা ঠিক তখনই র‌্যাব ওই মাদকাসক্ত রেপিস্টকে গ্রেপ্তার করেছে।

গতকাল ভোরে শেওড়া রেল ক্রসিং এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম মজনু (৩০)। পেশায় ছিনতাইকারী মজনুর বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। সে ওই এলাকায় মৃত মাহফুজুর রহমানের ছেলে। র‌্যাব জানিয়েছে, সিরিয়াল রেপিস্ট মজনুর মাদক সেবন, ছিনতাই ও চুরি করা নিত্যদিনের কাজ। গতকাল দুপুরে কাওরান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেম।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, স্পর্শকাতর এ ঘটনাটি জানার পর থেকে র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে নামে। ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় করা মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। মামলাটি সম্পুন্ন ক্লু লেস ছিল। কোনো তথ্য বা শনাক্ত করার মত ভিডিও ফুটেজও ছিল না। শুধুমাত্র তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রথমে ভিকটিমের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি খায়রুল ইসলাম (৩৮) নামের এক রিকশা চালকের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে মোবাইলটি অরুনা বিশ্বাস (৪৫) নামের এক নারীর কাছ থেকে কিনেছে। এরপর তার সহযোগিতায় অরুণা বিশ্বাসকে খোঁজে বের করা হয়। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা অরুণাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারি মোবাইলের ডিসপ্লে ভাঙা অবস্থায় মজনু নামের এক ব্যক্তি তার কাছে এই মোবাইল ফোনটি ৪০০ টাকায় বিক্রি করেছে। অরুণার কাছ থেকে মজনুর চেহারার একটি বর্ণনা নেয়া হয়। এছাড়া মজনুর পরিচিতদের কাছ থেকেও তার সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়। এসব তথ্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর দেয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হই মজনু ধ’র্ষক। পরে গোয়েন্দা তথ্যর ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কর্নেল সারোয়ার বলেন, প্রাথমিকভাবে মজনু স্বীকার করেছে সে একজন মাদকাসক্ত। ১০ বছর আগে সে কর্মের সন্ধানে হাতিয়া থেকে ঢাকা আসে। ১২ বছর আগে ট্রেন থেকে পড়ে তার দুটি দাত ভেঙ্গে যায়। তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। স্ত্রী না থাকলেও পরবর্তীতে আর কোনো বিয়ে না করে চুরি, ছিনতাই, রাজাহানিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। ছিনতাই করতে গিয়ে মানুষের ব্যাগ মোবাইল ফোন কেড়ে নিত। আর সুযোগ পেলেই সে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালাত। ধ’র্ষক মজনুর বরাত দিয়ে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে ওই শিক্ষার্থীকে সে একাই ধ’র্ষণ করেছে। সে আগে থেকেই কুর্মিটোলা ও আশেপাশের এলাকায় ওঁত পেতে ছিল। ঢাবির ওই শিক্ষার্থী বাস থেকে নামার পর তাকে সে অনুসরণ করতে থাকে। মেয়েটি বাস থেকে নেমে ফুটপাত দিয়ে হেটে তার বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলো। এলাকাটি অনেকটা নির্জন হওয়াতে মজনু তার পিছু ধরে হঠাৎ করেই ওই শিক্ষার্থীর গলা টিপে ধরে পৈচাশিকভাবে তাকে টেনে নিয়ে যায় পাশের ঝোপের পেছনের নির্জন স্থানে। সেখানেই তার ওপর সে পাশবিক নির্যাতন চালায়। ভুক্তভোগীকে সে একাধিকবার কিল, ঘুষি, লাথি ও চড় থাপ্পর দেয়। গলা টিপে ধরে সে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। ওই মূহুর্তগুলো ভুক্তভোগী পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকবার সে অচেতন হয়ে পড়ে। যখন তার চেতনা ফিরে আসে তখন সুযোগ বুঝে সে সেখান থেকে পালিয়ে রাস্তার উল্টো পাশে আসে পানি খায়। পরবর্তীতে সে একাই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা হাসপাতালে যায়।

সারোয়ার বলেন, মজনু পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর রেখে যাওয়া মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়। মোবাইলটি বিক্রি করে দেয় অরুণার কাছে। তারপর সে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নরসিংদী স্টেশনে গিয়ে রাত কাটায়। মঙ্গলবার সারাদিন বনানী স্টেশনে ছিল। তিনি বলেন, ক্লুলেস এই মামলায় ধ’র্ষককে শনাক্ত করা ছিল আমাদের কাছে একটি চ্যালেঞ্জ। অরুণা ও মজনুর পরিচিতদের কাছ থেকে বর্ননায় আমরা জানতে পেরেছিলাম মজনুর সামনের দুটি দাত ভাঙ্গা, কুকড়া চুল, নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলে এবং সে নিরক্ষর। এই তথ্যগুলো আমরা ভুক্তভোগীর তথ্যর সঙ্গে মিল পাই। কারণ ভুক্তভোগীও বলেছিলো ধ’র্ষকের সামনের দুটি দাঁত ভাঙ্গা ও চুল কুকড়া। পরবর্তীতে মজনুর ছবি তুলে এনে ভুক্তভোগীকে দেখানো হয় একাধিকবার। আমরা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছি যে ধ’র্ষক মজনুই। ভুক্তভোগী মজনুর ছবি দেখে নিশ্চিত হয়ে বলেছে ছবির লোকটিই তার ধ’র্ষক। এবং পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গেলেও সে এই চেহারা কোনো দিন ভুলবে না।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের এই পরিচালক সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। ধ’র্ষণের সময় মজনু মেয়েটিকে অজ্ঞান করার জন্য কোনো ক্লোরোফর্ম ব্যবহার ও এবং তার কাছে ধারালো অস্ত্র ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মজনুর কাছে কোনো ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। সে মেয়েটিকে অজ্ঞান করার জন্য ক্লোরোফর্ম ব্যবহার করেছে এমনটি স্বীকার করে নাই। তবে ঘটনাস্থলের আশেপাশে রেলওয়ে স্টেশন আছে। তাই এর আশেপাশে সবসময় মাদকাসক্ত ও ছিনতাইকারীরা থাকে। বুধবার সন্ধ্যার ভেতরে আমরা বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রেললাইনের দুই পাশে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ওই এলাকাটি ঝুঁকিমুক্ত করবো। অরুণা বিশ্বাস ও খায়রুল ইসলামকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেহেতু মামলাটি ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমারা মজনু, অরুণা বিশ্বাস ও খায়রুল ইসলামকে ডিবির হাতে তুলে দিব। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মজনু সব সময় মাদকাসক্ত থাকত। আর মাদকাসক্তের কোনো হিতায়িত জ্ঞান নাই। তারা যেকোনো ধরণের অপরাধ করে বেড়ায়। মেয়েটিকে একা পেয়ে সে একাই তার ওপর পৈচাশিক নির্যাতন চালিয়েছে। সারোয়ার বলেন, মজনু আরও ৫/৬ নারীকে ধ’র্ষণ করেছে। সে এসব ধ’র্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করেছে। তার মধ্যে অনুশোচনার কোনো ছাপ নেই।

প্রসঙ্গত গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে রওয়ানা দেন ওই শিক্ষার্থী। রাস্তা ভুল করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডে নামেন। এরপর ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় অজ্ঞাত কেউ তার মুখ চেপে ধরে সড়কের পেছনে নির্জন ঝোপে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে ধ’র্ষণের পাশপাশি শারীরিক নির্যাতন করে। রাত ১০টার দিকে যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে তখন একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে বন্ধুর বাসায় গিয়ে তাকে সবকিছু খুলে বলেন। রাত ১২টার দিকে তাকে এনে ঢাকা মেডিকেলের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরের দিন ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষা নীরিক্ষার পর তার শরীরে ধ’র্ষণের আলামত রয়েছে বলে জানান ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। এ ঘটনা জানাজানির পরপরই ফুঁসে উঠে ঢাবির শিক্ষার্থীরা। প্রথমদিন তারা শাহবাগ মোড় যানবাহন আটকে অবরোধ করে। পরবর্তীতে তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ ও মানবন্ধন করেছে। ধ’র্ষককে গ্রেপ্তারের জন্য তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছিলো। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রথম থেকেই ঘটনাটিকে গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়েছিলো। আইজিপি বলেছিলেন, এক নম্বর প্রায়োরিটি দিয়ে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। সূত্র: মানবজমিন।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button