যে কারণে বাদ পরলেন সাঈদ খোকন !!

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তার পরিবর্তে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে। আওয়ামী লীগের সূত্র মতে, নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে না পারা, বিভিন্ন সময়ে ‍বেফাঁস মন্তব্য, মশা নিধনে ব্যর্থতা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারাসহ নানা কারণে তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী সূত্র জানায়, মেয়র হিসেবে পুরো একটি টার্ম সাঈদ খোকন দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। এসময় ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ও বেফাঁস কিছু মন্তব্যের কারণে খোকন অনেকবার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছেন। মেয়াদের পুরো সময়ে তিনি কয়েকবার আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন। এছাড়া, দলের রাজনীতিতেও কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন তিনি, যেটা ক্ষমতাসীন দলের ইমেজ নষ্ট করেছে। এছাড়া, মেয়র খোকন নগরবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার পুরোপুরি প্রতিফলন ঘটাতে পারেননি।

সেকারণেই তাকে বাদ দিয়ে ডিএসসিসির মেয়র পদে এবার নতুন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ২৫ জুলাই রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এক অনুষ্ঠানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাকে ‘গুজব’ বলে অবহিত করেন মেয়র খোকন। তিনি বলেন, ‘মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে সেটি কাল্পনিক তথ্য। এটা সম্পূর্ণভাবে কাল্পনিক, বিভ্রান্তিমূলক। ছেলে ধরা, সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা।’ মেয়রের এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দলের ভেতরে সমালোচনা ঝড় ওঠে। এছাড়া, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় বেশ কয়েকবার নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হন তিনি।

এর আগে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আজিমপুরের পার্ল হারবাল কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন স্থানে কর্মী সমাবেশ ডাকে আওয়ামী লীগ। তার পাশেই ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন পাল্টা কর্মসূচি দেন। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেওয়ায় কে বা কারা সমাবেশস্থলের সামনে ট্রাক ভর্তি করে সিটি করপোরেশনের ময়লা রেখে যান। ওই ঘটনার জন্য মেয়র সাঈদ খোকনকেই দোষারোপ করা হয়। তখন তৎকালীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র খোকনের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দলীয়ভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাঈদ খোকন।

গত শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য এবং ভোটারদের কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন প্রার্থীদের ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন দেওয়া হবে। বিতর্কের ঊর্ধ্বে যারা আছেন, যাদের কোনও অপকর্মের রেকর্ড নেই— তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমাদের নেত্রীরও ইচ্ছা ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার।’ দলের সাধারণ সম্পাদকের মুখে এমন ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে মেয়র খোকনের মনোনয়ন নিয়ে নানা কানাঘষা শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নানা বিতর্কিত বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের কারণেই ইমেজ সংকটে পড়া মেয়র খোকনকে দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ফরম সংগ্রহ করার পর মেয়র সাঈদ খোকন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘আপনাদের সুখে-দুঃখে যেভাবে ছিলাম, সেভাবেই যেন থাকতে পারি। কিছু কাজ বাকি আছে, সেগুলো যেন শেষ করতে পারি। আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে বলছি, আমি কখনও কর্তব্যে অবহেলা করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিতার হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। আজ পিতা নেই। পিতার অবর্তমানে আমার অভিভাবক আমার নেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন, সেটাই করবেন।’ মেয়র খোকন নির্বাচনের পূর্বে ও পরে নগরবাসীকে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলোর পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। তবে অনেক দূর এগিয়েছেন বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তার প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ছিল— নাগরিকদের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে দেওয়া, বুড়িগঙ্গার স্বরূপ ফিরিয়ে আনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন, ডিজিটাল নগরী প্রতিস্থাপন, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ, মাঠ ও পার্ক উদ্ধার, বাস্তি উন্নয়ন ও যানজট মুক্ত ঢাকা গড়া। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে পুরোপুরিভাবে কোনোটাই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *