যে কারণে বিশ্রাম গ্রহণ ও ইবাদতের প্রস্তুতির মাস জিলকদ !!

জিলকদ মাস মর্যাদার মাস। হিজরি বছরের ১১তম মাস এটি। কুরআনের ঘোষিত সম্মানিত চার মাসের একটি জিলকদ। যে কোনো রক্তপাতমূলক কাজই এ মাসে হারাম। বিভিন্ন কারণে ইসলামের ইতিহাসে এ মাসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে যে কয়টি ওমরা করেছেন তার সব কটি করেছেন এ জিলকদ মাসে। ইসলামের ঐতিহাসিক ঘটনা হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ান এ মাসেই সংঘটিত হয়েছিল। রমজান পরবর্তী ঈদের মাস শাওয়াল ও হজের মাস জিলহজের আগের মাস হওয়ায় জিলকদ মাসটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

রজব থেকে শাওয়াল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চার মাস মুমিন মুসলমান ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত সময় পার করে। যে কারণে শাওয়াল পরবর্তী মাসকে বিশ্রামের মাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কারণ জিলকদ মাসটির প্রকৃত নাম হলো জুল-আল-কাআদাহ। এর অর্থ হলো বসা বা স্থিত হওয়া এবং বিশ্রাম নেয়া।

জিলকদের আগের চার মাসের ব্যাখ্যা এভাবে এসেছে-

– রজব হলো আল্লাহর মাস, বেশি বেশি নফল ইবাদতের মাস।- শাবান হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাস, ইবাদতের বীজ বপনের মাস; নিসফ শাবান বা শবে বরাত এবং সর্বাধিক নফল রোজা ও নফল ইবাদতের মাস।

– রমজান হলো উম্মতের মাস, ফসল তোলার মাস, ফরজ রোজা, তারাবির নামাজ, কিয়ামুল্লাইল; কুরআন নাজিলের মাস এবং ইবাদত–তেলাওয়াতে মশগুল থাকার মাস।- শাওয়াল হলো ঈদুল ফিতর, সদকাতুল ফিতর ও নির্ধারিত সুন্নাত গুরুত্বপূর্ণ ছয় রোজার মাস।

বিশ্রাম গ্রহণের মাস জিলকদ

আর জিলকদ মাস হলো বিশ্রাম গ্রহণের মাস। কেননা এ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নাত কোনো আমল নেই বিধায় এ মাসে মুমিন মুসলমান বিশ্রাম নেয়। আর এ মাসে যাতে মুমিন মুসলমান যে কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহ তথা বাদানুবাদ থেকে বিরত থাকতে পারে, তাইতো এ মাসে সব ধরনের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আরবের লোকেরা এ মাসে বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত এবং বিশ্রাম গ্রহণ করত তাই এই মাস বিশ্রামের মাস। আবার ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়–অপরাধ (মদ্যপান) থেকেও নিবৃত্ত থাকত। এসব কারণেও এই মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর)

ইবাদতের শক্তি অর্জনের মাস

রজব ও শাবান মাসে নফল রোজা পালন, রমজানজুড়ে রোজা ও রাতে ২০ রাকাআত তারাবিহ এবং তাহাজ্জুদ আদায় শাওয়ালে ৬ রোজা রাখার পর হিজরি বছরের শেষ মাস জিলহজে হজের ইবাদতের প্রস্তুতিতে নিজেকে প্রাণবন্ত করার মাস হলো জিলকদ।

এ মাসে শক্তি সঞ্চার করে জিলহজ মাসের প্রথম ৯টি রোজা এবং মহররমের ১০টি নফল রোজা ও ইবাদতে অতিবাহিত করার শক্তি অর্জন করবে মুমিন-মুসলমান।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলকদ মাসে পরিপূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করে হজের মাস ও মহররমের রোজা এবং ইবাদত-বন্দেগির জন্য প্রস্তুতি নেয়ার তাওফিক দান করুন। জিলকদ মাসে যাবতীয় অন্যায় ও অনাচার থেকে বিরত থেকে জিলকদ মাসের পবিত্রতা রক্ষার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *