রামদা দিয়ে পাঁচ রাজাকারকে হ’ত্যা করেছি: মুক্তিযোদ্ধা সখিনা !!
মুক্তিযুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। দেশে যতদিন রাজাকার থাকবে, ততদিন মুক্তিযুদ্ধ চলবে। এবার সেই যুদ্ধে জয়ী হতে বর্তমান সরকার রাজাকারদের বিচার শুরু করেছে। আশা করছি সরকার তাদের বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবেই শেষ করবে।’ কথাগুলো কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা সখিনা বেগমের (৭২)। ১৯৭১ সালে যেসব নারী বীরত্বের সঙ্গে রণাঙ্গনে লড়াই করে সাহসিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন সখিনা বেগম তাদের মধ্যে একজন। ১৯৭১ সালে রামদা দিয়ে পাঁচ রাজাকারকে হ’ত্যা করেন এই নারী মুক্তিযোদ্ধা।
সখিনা বেগম বলেন, ‘সেদিন যারা ধর্ষণ করেছে, গ’ণহ’ত্যা করেছে, দেশের সম্পদ লুট করেছে, সেই রাজাকাররা এখন সদর্পে ঘুরে বেড়ায়। এ কথা মনে হলে মাথা গরম হয়ে যায়। ইচ্ছে করে একাত্তরের রামদাটি আবার হাতে নিই।’ নিকলী উপজেলার গুরুই গ্রামে সখিনা বেগমের জন্ম। ১৯৭১ সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা বসু বাহিনীর অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে সখিনা বেগম বিভিন্ন স্থানে সমুখযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯ অক্টোবর নিকলীকে মুক্ত করতে গিয়ে তার বোনের ছেলে মতিউর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হা’মলা চালান। যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার নিহত হয়। সখিনা বেগম সেই যুদ্ধে একাই পাঁচ রাজাকারকে রামদা দিয়ে হ’ত্যা করেন। তার ব্যবহার করা ওই রামদা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
একাত্তরে সখিনা বেগমের সাহসিকতার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে তাকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন। চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সেই টাকা শেষ হয়ে যায়। বর্তমানে প্রতি মাসে যে দশ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান, সেই টাকাও ওষুধ কেনার জন্য ব্যয় করতে হয় অসুস্থ এই নারী মুক্তিযোদ্ধাকে।
সোমবার দুপুর ১২ টায় নিকলী অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টারে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও আলোচনা সভায় আসা সখিনা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গুরুই গ্রামে তাকে তিন শতাংশ খাসজমি বরাদ্দ দেয়। কিন্তু টাকার অভাবে সেই জমিও বিক্রি দেন। তাই বরমাইপাড়ায় খালার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বীরাঙ্গনা সখিনা বেগম। নিঃসন্তান সখিনা বেগমের স্বামী মারা গেছেন পাকিস্তান আমলেই।
সখিনা বেগম বলেন, ‘দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হ’ত্যার বদলা নেওয়ার সময় এসেছে। রাজাকারদের বিচার বর্তমান সরকার শুরু যখন করেছে। আশা করি এ সরকারই এর বিচার শেষ করেই ছাড়বে। এ বিচার কাজ শেষ করতে এখন নতুন প্রজন্মের সময়ের দাবি।’ নিকলী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সখিনা বেগম দুঃসাহসিক নারী মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও স্থানীয় রাজাকাররা তার ভয়ে অনেক দিন পালিয়ে ছিল।’ সূত্র: ইত্তেফাক।