Jana Ojana

রেমডেসিভির কী? কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে এই ওষুধ !!

কোভিড আতঙ্কে পৃথিবী জুড়ে শুধুই হাহাকার। প্রতিষেধক ও ওষুধের খোঁজে হন্যে গবেষকরা। এমন সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে কিছুক্ষণের জন্য ভেসে ওঠে একটা রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, করোনা-নিরাময়ে চীনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ব্যবহৃত ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। যেটুকু আশা দেখা দিয়েছিল, তাও নিভে যায় তখনই। তবে কে জানত, পরিস্থিতি বদলে যেতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি! কিছুক্ষণের মধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইট থেকে ওই তথ্য তুলে নেওয়া হয়। জানানো হয়, রেমডেসিভির সংক্রান্ত রিপোর্ট ভুল। জিলিয়াড সায়েন্সেস-এর তৈরি করা অ্যান্টিভা’ইরাল ড্রাগ ‘রেমডেসিভির’ সম্পর্কে রিপোর্টের খবরটি প্রথম প্রকাশ্যে আনে ব্রিটিশ দৈনিক ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’। পরে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ভুল করে ওই খসড়া রিপোর্ট প্রকাশ্যে চলে এসেছিল।

এই ভুল স্বীকারের পর থেকেই করোনা-রোধের এই অ্যান্টিভা’ইরাল ড্রাগ ‘রেমডেসিভির’ নিয়ে আগ্রহ শুরু হয় গোটা বিশ্বে। ওষুধ প্রস্তুতকারী মার্কিন সংস্থা ‘জিলিয়াড সায়েন্সেস’-ও দাবি করে, ভুলবশত প্রকাশ্যে আসা এবং ডিলিট করে দেওয়া কোনও রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ড্রাগটি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসা ঠিক নয়। বরং এই ওষুধের কিছু সুফল পাওয়া গিয়েছে বলে জানায় সংস্থা।

চীনে রেমডেসিভিরের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়। চীনের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় আমেরিকাতেও। মার্কিন এপিডেমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফসি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভুল নস্যাৎ করে দিয়ে দাবি করেন, যে সব করোনা-রোগীকে রেমডেসিভির দেওয়া হয়েছে, তারা অন্যদের থেকে ৩০ শতাংশ দ্রুত সুস্থ হয়েছেন। ফসির এই দাবি থেকেই করোনা-যুদ্ধে নতুন করে আশার আলো দেখেতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা।

চীন কেন তা হলে ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনল? ফসির মতে, রেমডেসিভিরের মার্কিন ট্রায়ালে আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ১০৬৩ জন রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়েছিল ওষুধটি। চীনে তুলনায় সামান্য সংখ্যক রোগীকে ওষুধটি দেওয়া হয়েছিল। তাই সম্ভবত ওই ভুল রিপোর্ট।

রেমডেসিভির নিয়ে মার্কিন গবেষকদলে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূতও ছিলেন। অরুণা সুব্রহ্মণ্যম নামে মেডিসিনের ওই অধ্যাপকও বলেছেন, ‘১০ দিনের সাধারণ চিকিৎসায় যা ফল মিলছে, পাঁচ দিনেই সেই কাজ করে দেখাচ্ছে রেমডেসিভির।’এর আগে ইবোলা ভা’ইরাস যখন সারা বিশ্বকে চোখ রাঙাচ্ছিল, তখন ইবোলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে এই ওষুধের সফল প্রয়োগ শুরু হয়। পরে এর অ্যান্টিভা’ইরাল ক্ষমতার উপর আস্থা রেখে মার্স ও সার্স হানার সময়ও রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়।

‘রেমডেসিভির’-এর কথা জানিয়ে তিনি ২৯ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করেন অ্যান্টনি ফসি। ফসির কথায়, ‘রেমডেসিভির ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য জানাচ্ছে, ওষুধটির স্পষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ এবং খুবই সদর্থক প্রভাব রয়েছে রোগীর শরীরে। ফলে তা দ্রুত রোগীকে সুস্থ করে।’

ফসির দাবি, বহু পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখেছেন, করোনা আ’ক্রান্ত রোগীদের সারিয়ে তুলতে অন্যান্য ড্রাগগুলোর তুলনায় রেমডেসিভির প্রায় ৩১ শতাংশ বেশি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। প্রায় ১১ দিনে সুস্থ হয়ে উঠছেন অনেকে। তিনি জানিয়েছেন, এই ওষুধ কতটা কার্যকরী হচ্ছে, তা বোঝার জন্য আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার ৬৮টি জায়গায় ১ হাজার ৬৩ জন করোনা রোগীর উপর তা প্রয়োগ করে ট্রায়াল চালানো হয়। দেখা গিয়েছে, তাতে আশ্চর্যজনক ফল মিলেছে। মৃত্যুপথযাত্রী অনেক রোগীকেই সারিয়ে তুলেছে এই ওষুধ। আর ওই ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের কোনও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ারও শিকার হতে হয়নি।

এই রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হলে আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে বাজারজাত করার কথা ভাবছে জিলিয়াড সায়েন্সেস। সংস্থাটির শেয়ারদরও ৯ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। তবে বাজারজাত করার আগে সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-র সঙ্গে এই ওষুধ সম্পর্কিত নানা তথ্যের আদানপ্রাদান জারি রাখবে। ওষুধের প্রয়োগে কেমন ফলাফল আসছে, তাও সিডিসি-কে জানাবেন তাঁরা।

শুধু রেমডেসিভির নয়, করোনা প্রতিহত করতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, টোসিলিজুমাব, ফ্যাবিপিরাভিরের মতো ওষুধও ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের দেশে রেমডেসিভিরের জোগান রয়েছে ৬০ শতাংশ। সেখানে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন রয়েছে ৮১ শতাংশ। অন্য অ্যান্টিভা’ইরাল ওষুধগুলির জোগান আছে ৭৯ শতাংশ।

রেমডেসিভির নিয়ে আশাবাদী কলকাতার চিকিৎসকরাও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, রেমডেসিভির নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ বিভাগের অ্যান্টিভা’ইরাল ওষুধ। রেমডেসিভির নিয়ে এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ফলাফলও ভাল। এখন পরিস্থতি এমন যে, হাতে সময় নেই। ফলে যে সব ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কিছুটা ভাল ফল মিলছে, তাদের নিয়েই চিকিৎসা করতে হচ্ছে। রেমডেসিভির সে সব ওষুধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল কাজ দিচ্ছে। আইসিএমআর ভারতে এই ওষুধের প্রয়োগে সবুজ সঙ্কেত দিলে সরকারি ক্ষেত্রেও এই ওষুধের প্রয়োগ শুরু হবে।

শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার এই রেমডেসিভির ব্যবহারে সিলমোহর দিল। জানিয়ে দিল, ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এই ওষুধকে মান্যতা দিয়েছে। ফলে এখন মার্কিন দেশে করোনা চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহারে সরকারি নির্দেশও এল।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button