লা’শের সঙ্গে স্বজনদের এ কেমন নি’ষ্ঠুরতা !!

করোনাভা’ইরাসে আ’ক্রান্ত হয়ে কিংবা করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লা’শ দাফনে স্বজনদের অবহেলার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসছে।এই ব্যক্তিগুলো তাদের জীবদ্দশায় হয়তো কখনো কল্পনাও করেননি যে মৃ’ত্যুর’ পর তাদের লাশের পাশে কা’ন্না করার মতো কেউ তো থাকবেনই বরং তাদের ম’রদেহ নিয়ে তৈরি হবে জটিলতা।

এমনই এক নিষ্ঠুর ও অ’মানবিক ঘটনার শি’কার হলেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের কুরুইন গ্রামের অহিদুর রহমান (৩৮)। তিনি ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান মিয়ার ছেলে এবং একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ছিলেন। কুমিল্লার রেসকোর্স এলাকায় স্ত্রী নুসরাতসহ দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকতেন তিনি। করোনার উপসর্গ নিয়ে গত মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে তিনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা’রা যান। পরে বিকেল ৫টার দিকে অহিদুর রহমানের লা’শ একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। লা’শ পৌঁছানোর পর দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে লা’শ পড়ে ছিল। কিন্তু অহিদুরের মা-বাবা, ভাই-বোন বা কোনো আত্মীয়-স্বজনের দেখা মেলেনি।

অ্যাম্বুলেন্সে লা’শ পড়ে আছে এমন খবর পেয়ে স্থানীয় ছাত্রলীগের ‘ওরা ৪১ জন’ নামে একটি টিম অহিদের লা’শ দাফনের জন্য এগিয়ে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ময়নাল হোসেন মনির লা’শ দাফনে বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মৃ’ত অহিদের স্ত্রী নুসরাতসহ স্থানীয় একাধিক লোকজন। যার কারণে টানা সাড়ে চার ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সেই পড়ে ছিল অহিদের ম’র’দেহ।

অবশেষে অহিদুর রহমানের লা’শ দাফনের ব্যবস্থা হলেও জানাজায় তার চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই মোসলেম উদ্দিন ছাড়া অন্য তিন ভাই কামাল উদ্দিন, জামাল হোসেন, শহিদ মিয়া এবং ছয় বোন ও তাদের কারও স্বামী, সন্তানরা কেউ উপস্থিত হননি। নিজের গর্ভধারিনী মা ছেলের মুখ শেষবারের জন্য দেখতে আসেননি। তবে তার বাবা আবদুল মান্নান বার্ধক্যজনিত কারণে জানাজায় আসতে পারেননি বলে জানা যায়।

মৃ’ত অহিদুর রহমানের স্ত্রী নুসরাত জাহান নিপা অ’ভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামীর ম’রদেহের সাথে সবাই অ’মানবিক আ’চরণ করেছে। ময়নাল হোসেন মনির আমার স্বামীর লা’শ কবরস্থানের রাস্তা দিয়ে নিতে দেয়নি। কবরস্থানে যাওয়ার রাস্তা থাকার পরও কয়েকজন লোক রাত সাড়ে ১২টার সময় আমার স্বামীকে ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে কাদা ও হাঁটু পানি মারিয়ে অন্ধকারের মধ্যে নিয়ে গেছে। কেউ একটি টর্চলাইটও দেয়নি। আমার স্বামীর ম’রদেহ আমি কুমিল্লা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসি এ কারণে তারা আমাকেও ঘরে ঢুকতে দেয়নি। তারা আমার স্বামীর সাথে নি’ষ্ঠুর আ’চরণ করেছে।’

এ বিষয়ে মৃ’ত অহিদুর রহমানের ভাই কামাল হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার মুরগির ফার্মে মুরগি উপোস ছিল তাই পানি দিতে গিয়েছিলাম। জানাজায় আসতে পারিনি।’ভাইয়ের লা’শ অ্যাম্বুলেন্সে রেখে মুরগিকে পানি খাওয়ানো কি বেশি জরুরি ছিল, এমন প্রশ্নে তিনি চুপ থাকেন এবং অন্যকে ফোন ধরিয়ে দেন।

এদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ময়নাল হোসেন মনির তার বি’রুদ্ধে লা’শ দাফনে অসহযোগিতার সব অ’ভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি বাড়িতেই ছিলাম, তবে লা’শ দাফনে বাধা দেইনি। আমার নামে মি’থ্যা কথা ফেসবুকে লেখা হয়েছে।’বাড়িতে থাকার পরও কেন জানাজায় উপস্থিত ছিলেন না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার প্রেসার বেড়ে গিয়েছিল তাই আমি ডাক্তারের কাছে বাজারে গিয়েছিলাম।’

‘ওরা ৪১ জনের’ টিম লিডার আবু কাউছার অনিক বলেন, ‘অহিদুর রহমানের ম’রদেহটি কবরে নামাতে কেউ এগিয়ে আসেননি। স্বজনদের কাছে কাফনের কাপড় চাওয়া হলে এক মহিলা একটি পুরোনো ময়লা ওড়না দিলেন কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করার জন্য! পুরোনো ওড়না দিয়ে ‘লা’শ দাফন করতে মন সায় দিচ্ছিল না।’তিনি আরও বলেন, ‘অনেকক্ষণ পরে কেউ একজন একটি কাফনের কাপড় ব্যবস্থা করেছেন। অহিদুর রহমান করোনা উপসর্গ নিয়ে মা’রা গেছে এ ভয় কাজ করছিল সকলের মনে। আমরা অনেক বাধা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে রাত ২টার দিকে অহিদের দাফন কাজ শেষ করি।’

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান বলেন, ‘আমি ঘৃণা জানাচ্ছি তাদের প্রতি যারা লা’শের সাথে এমন ব’র্বর ও অ’মানবিক আ’চরণ করেছেন। আমি তাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, করোনায় আমি-আপনিও মারা যেতে পারি। এই দুনিয়া চিরস্থায়ী থাকার জায়গা নয়, চলে যেতে হবে সবাইকে। লা’শের সাথে এমন নিষ্ঠুর-নির্দয় আচরণ বন্ধ করুন।’ উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *