শুধু সৌদি থেকেই ফিরতে হবে ১০ লাখ বাংলাদেশীকে !!
নিজ নাগরিকদের ফিরিয়ে নাও, না হলে বিভিন্নভাবে তাদের সমস্যায় ফেলা হবে—বাংলাদেশের জন্য ঠিক এমন হু’ম’কিই এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে।এ পরিস্থিতিতে কেবল সৌদি আরব থেকেই বিতাড়িত হবেন প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশী। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমন তথ্য জানিয়েছে।শুধু সৌদি আরব নয়, কাতার, ইরাক, বাহরাইনসহ উপসাগরীয় দেশগুলো অবৈধ শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ থেকে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিকের পাশাপাশি আসামি ফেরত পাঠাতে চাইছে। দেশটির সঙ্গে যেহেতু সা’জা’প্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর বা ট্রান্সফারিং অব সেনটেন্স পারসনবিষয়ক চুক্তি রয়েছে, সেহেতু তাদের বলা হয়েছে আগে বাংলাদেশীদের তালিকা পাঠাতে। নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে আনবে।
২০১৫ সাল থেকে সৌদি আরবের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের কারণে সেখানে থাকা বৈধ ও অবৈধ অন্য দেশের নাগরিকদের বিতাড়নের নীতি নিয়েছে দেশটির সরকার।এখন আর সাধারণ ক্ষমা করে পুনরায় বৈধ হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে না সৌদি আরব সরকার। এ প্রেক্ষাপটে সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস আশঙ্কা করছে, এবার ৫ থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশীকে বিতাড়িত করবে সৌদি সরকার।
এ পরিস্থিতিতে গত বছরের শেষ দিক থেকে সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ, হুরুব হয়ে যাওয়া, অবৈ’ধ হয়ে যাওয়া অনিবন্ধিত বাংলাদেশীদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে।দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভাগ করে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশীদের নিবন্ধনের আহ্বান জানানো হয়। তখন থেকেই সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কনসুলেট প্রতিনিয়ত এসব বাংলাদেশীর তালিকা প্রণয়নে কাজ করছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে। শুরুতে অবৈধ ও আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশীদের নিয়ে আসতে বলছে।তারপর হয়তো বৈ’ধভাবে যেসব বাংলাদেশী রয়েছেন, তাদের বিভিন্ন উপায়ে সৌদিতে টেকা কঠিন করে দেবে দেশটি। এর উদাহরণ আমাদের সামনেই রয়েছে। মিসরের নাগরিকদের জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে যে তাদের অনেকেই সৌদি আরব ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
দেশটিতে থাকা বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে সরকার থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যাদের পাসপোর্ট নেই বা কোনো ট্রাভেল ডকুমেন্ট নেই, তাদের কীভাবে এ নথিগুলো দেয়া হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৫ থেকে ১০ লাখ মানুষকে হয়তো এখনই ধরে বি’তাড়িত করবে না সৌদি সরকার। তবে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বিশালসংখ্যক বাংলাদেশীকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করবে দেশটি।
সৌদি আরবের ২০৩০ ভিশন অনুযায়ী, পুরো সৌদির শ্রমবাজারে ৭০ শতাংশ সৌদি আরবের নাগরিককে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে দেশটির। এটি বাস্তবায়নে সব দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের ক্রমান্বয়ে ছাঁটাই করে নিজ দেশে ফেরত পাঠাবে সৌদি সরকার।এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাধামূলক ব্যবস্থা নেয়া শুরু করেছে সৌদি সরকার। বিশেষ করে করের ক্ষেত্রে। সৌদিতে বিদেশী কর্মীদের পরিবারের ওপর মাসিক চার্জ আরোপ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইকামার ফি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
আর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে টিউশন ফি বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি কর বাড়িয়ে দিয়েছে, যার কারণে এরই মধ্যে মিসরের ১১ লাখ নাগরিকসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা সৌদি ছেড়ে চলে গিয়েছেন।আরো দেশের নাগরিকরা সৌদি ছাড়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এসব নাগরিকের বেশির ভাগই পেশাজীবী। বিভিন্ন উপায়ে অভিবাসীদের বের করে দিলেও সৌদি আরবের বর্তমান পরিস্থিতিতে সৌদি নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে।
বাংলাদেশীদের একত্রে না পাঠিয়ে ধাপে ধাপে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ১০ লাখ বাংলাদেশীকে বিতাড়িত করার হু’ম’কি নিয়ে প্রশ্ন করলে বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আমরা সেটা শুনেছি এবং তারা যথেষ্ট তাগাদা দিচ্ছে।কিন্তু আমরা তাদের বলেছি, আমরা একসঙ্গে এত লোক আনতে পারব না। আমরা আমাদের নাগরিক অবশ্যই নিয়ে আসব। তবে ধাপে ধাপে আনতে চাই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ দুটি কাজ করেছে। এর মধ্যে একটি হলো যারা আনডকুমেন্টেড ও অবৈধ তাদের নিবন্ধন করার জন্য বলছে। নিবন্ধন করলে আর কোনো জরিমানা দিতে হবে না। আর দেশে যেতেও তাদের কোনো খরচ লাগবে না।
এতে করে বাংলাদেশীরা দল বেঁধে নিবন্ধন করছেন। আর নিবন্ধনের পর তাদের ক্যাম্পে রেখে দিচ্ছে। এখন তাদের বাধ্য হয়ে চলে আসতে হবে। আর জে’লে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছে। এদের জে’ল থেকে সোজা প্লেনে উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে।এতেও আরো বিরাটসংখ্যক লোক আসছেন। আমরা এ বিষয়ে তাদের জানিয়েছি যে জে’লে যারা রয়েছেন তাদের তথ্য আমাদের আগে দেয়ার জন্য। এরা আমাদের দেশের নাগরিক কিনা, তা আমাদের যাচাই-বাছাই করতে হবে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা