সারাদেশে উপসর্গ ছাড়াই বাড়ছে করোনা রোগী !!

রাজধানীসহ সারাদেশে উপসর্গ ছাড়াই করোনায় আ’ক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এতে ঝুঁকিও বেশি। উপসর্গবিহীন রোগীর মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছে পরিবার, প্রতিবেশী এবং যেখানে যাচ্ছে সেখানকার মানুষ। এ কারণে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বিষয়ে আতঙ্কে আছেন বিশেষজ্ঞরা, তার বলছেন বাংলাদেশে প্রচুর গোপন রোগী রয়েছে এবং তারা নীরব সংক্রমিত। এইভাবে চললে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে এবং দেশের জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকে তছনছ করে দিতে পারে। সামগ্রিকভাবে একটা দীর্ঘমেয়াদি মহামারির মধ্যে পড়তে পারে দেশ। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সারাদেশে পরীক্ষার পরিধি বাড়ানো এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বিকল্প নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, উপসর্গ নেই, অথচ করোনায় আ’ক্রান্ত—এসব রোগী সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। কারণ সে পরিবার, প্রতিবেশসহ যেখানে যাচ্ছে সেখানেই মানুষকে সংক্রমিত করছে। পজিটিভ কি না, জানে না। জানার আগেই অনেককে সংক্রমিত করে ফেলছে। তিনি বলেন, সারাদেশে চাহিদা অনুযায়ী করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি, এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সবারই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, নইলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর উপদেষ্টা ও বিএমএর কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেইভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার নন-টেকনিক্যাল পারসন দিয়ে পরীক্ষা করানোর কারণে ফলস রিপোর্ট আসে। তিনি বলেন, যত দিন রোগীর সংখ্যা কমে না আসে, লকডাউন কার্যকর করতে হবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সমীর সাহা বলেন, লক্ষণ ছাড়া করোনায় আ’ক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আর এর টিকা এক থেকে দুই বছরের আগে আসবে না।

টিকার ব্যাপারে ইতিমধ্যে আশা ছেড়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রয়োজন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সচেতন হওয়া। মানুষকে সচেতন করতে এদেশে গণমাধ্যম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে, কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছে না। তাই মানুষকে ঘরে রাখতে লকডাউন কার্যকর করতে হবে। আর রাজনীতিবিদ ও বিত্তশালীদের উচিত লকডাউনে ঘরবন্দি মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা করা।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বকে লকডাউন শিথিল করার ক্ষেত্রে ছয়টি বিষয় মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো—ভা’ইরাসটি ছড়ানো বন্ধ হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া। স্বাস্থ্য সিস্টেমগুলোতে নতুন কেসগুলো দ্রুত শনাক্ত, পরীক্ষা, বিচ্ছিন্ন এবং চিকিত্সা করার পাশাপাশি ঘনিষ্ঠ যোগাযোগগুলোর সন্ধান করার ক্ষমতা থাকতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কর্মক্ষেত্র, স্কুল ও দোকানগুলোতে স্থাপন করা। আমদানি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করা। সম্প্রদায় শিক্ষিত হবে এবং নতুন আদর্শের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।

দেশের রোগতত্ত্ববিদেরা বলছেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে দেশে উপসর্গহীন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আবার এমনও রোগী পাওয়া যাচ্ছে, যাদের শরীরে করোনার সব ধরনের উপসর্গ রয়েছে, কিন্তু তিনি করোনা আ’ক্রান্ত নন। গাইবান্ধায় দ্বিতীয়বার করোনা আ’ক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া এমন কিছু রোগী মিলছে, যাদের জ্বর, সর্দি ও কাশি হয় না ঠিকই, তবে তাদের স্বাদ ও গন্ধ বোঝার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। এমনকি হজমে সমস্যা হচ্ছে। ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে। মাথা ও কিডনিতে রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হচ্ছে। করোনা থেকে নিউমোনিয়ায় আ’ক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

রাজধানীর কয়েকটি সরকারি হাসপাতালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহে এসব হাসপাতালে যারা চিকিত্সার জন্য এসেছেন, তাদের ৯০ শতাংশের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। অর্থাত্, দেশে বর্তমানে ৫০ শতাংশ উপসর্গহীন করোনা রোগী আছেন। বাংলাদেশেই শুধু নয়, ভারতেও ৮০ শতাংশ লোকের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু যখন টেস্ট করে তখন করোনা পজিটিভ আসে। এমন রোগীর সংখ্যা তিন সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশে বাড়ছে। আপনার যদি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা থাকে, আপনি যদি ভালো খান, ব্যায়াম করেন, তাহলে বেশির ভাগই উপসর্গবিহীন আসে। এ সংখ্যাটা অনেক বড়ো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *