সৌদি আরবে করোনায় মৃ’তদের অর্ধেকই বাংলাদেশি !!
সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে ক’রো’না সং’ক্র’মণ ও প্রা’ণহানি আ’শ’ঙ্কা’জনক হারে বাড়ছে। দেশটিতে এ ভা’ই’রাসে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে মোট মৃ’ত্যু’র প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বাংলাদেশি উপসর্গ নিয়ে মা’রা গেছেন।এক জায়গায় গাদাগাদি করে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও অপুষ্টি এর মূল কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস মনে করছে অন্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় সেখানে বাংলাদেশিদের আ’ক্রা’ন্ত হওয়ার হার কিছুটা বেশি হলেও তা অস্বাভাবিক বা আ’শ’ঙ্কাজনক নয়।
ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত সৌদি আরবে করো’না’ভা’ইরাসে আ’ক্রা’ন্ত রোগীর সংখ্যা ৯৩ হাজার ১৫৭ জন। আর দেশটির সরকারি হিসাব অনুযায়ী,২৫ মে পর্যন্ত সেখানে ক’রো’না আ’ক্রা’ন্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ১০ হাজার ৯০৫ জন বলে জানান সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ। তিনি জানান, ওই সময় পর্যন্ত কো’ভি’ড-১৯ আ’ক্রা’ন্ত হয়ে ৮৭ জন বাংলাদেশি মা’রা গেছেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের হিসেবে নিশ্চিতভাবে করো’না’ভা’ইরাস আ’ক্রা’ন্ত এই ৮৭ জনের পাশাপাশি গত তিন মাসে কো’ভি’ড-১৯ এর উপসর্গ নিয়ে সৌদি আরবে মা’রা গেছে মোট ২২৪ জন বাংলাদেশি।ওই কর্মকর্তা জানান, মারা যাওয়া ২২৪ জনের মধ্যে ৮৭ জন নিশ্চিতভাবে কো’ভি’ড-১৯ রোগী ছিলেন। বাকিদের মৃ’ত্যু সনদে কারণ হিসেবে ‘কো’ভি’ড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মৃ’ত্যু উল্লেখ ছিল। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সৌদি আরবে করো’না’ভা’ই’রাসে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে মা’রা গেছেন ৫৭৯ জন।
রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ২২ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। সেই অনুপাতে যদি চিন্তা করেন তাহলে যেই পরিমাণ বাংলাদেশি কো’ভি’ড-১৯ আ’ক্রা’ন্ত হচ্ছেন, সেই হার খুব একটা আ’শ’ঙ্কাজনক নয়।
তা সত্ত্বেও তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের চেয়ে বাংলাদেশিদের আ’ক্রা’ন্ত হওয়ার হার বেশি বলে মন্তব্য করেন গোলাম মসীহ। তিনি বলেন, এখানকার বাংলাদেশিদের অধিকাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা বা সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। বেশি সংখ্যক বালাদেশির আ’ক্রা’ন্ত হওয়ার একটি কারণ সেটি হতে পারে।
স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার বিষয়টি বেশি বলে মনে করেন সেখানে বসবাসরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিকও। তবে তাদের বক্তব্য, জীবন ও জীবিকার তাড়নায় তারা অসচেতন জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।বাংলাদেশিদের অধিকাংশই কম দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। তারা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বদ্ধ জায়গায় একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসবাস করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে শারীরিক দূরত্ব মানা বা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রায় অসম্ভব।
সাগর চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি বিবিসি বাংলাকে জানান, তাদের শ্রমিক ক্যাম্পে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কোথাও এক রুমে ৮-১০ জন, কোথাও কোথাও তার চেয়েও বেশি থাকতে হয়।
চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রেও এদের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন বলে জানান তিনি। অনেকেই করো’না’ভা’ইরাস পরীক্ষা করাতে পারছেন না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকায় শ্বাসক’ষ্টের রোগী হাসপাতালে যেতে পারছেন না এবং চিকিৎসা না পেয়ে মা’রা যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সাগর চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশিদের মৃ’ত্যু’র হার বেশি হওয়ার আরেকটা কারণ এদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এখানে বাংলাদেশিরা যা আয় করে তার প্রায় পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেয়। তাদের স্বাস্থ্যজ্ঞানও শূন্যের কোঠায়।
করো’না’ভা’ইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় এ সময় সৌদি আরবে মা’রা যাওয়া বাংলাদেশিদের লা’শ দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ।তিনি বলেন, মৃ’ত’দের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে আমরা তাদের লা’শ এখানেই দা’ফ’ন করছি।
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা, যুগান্তর