স্বপ্নের বাড়ি করার ১৫ বছরের জমানো টাকায় হাসি ফোটালো ১২০ পরিবারের !!

মানুষ মানুষের জন্য। মানবতারই সেবাই আল্লাহর এবাদত। মানবিক ও সাদা মনের আলোকিত মানুষেরাই বিপদে আপদে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায়। অন্যের দুঃখ দেখলে এগিয়ে আসে। মানব প্রেম ও সেবার কাছে হারমানে বিত্তহীনতা। অর্থ, বিত্তবৈভব নয়, মানব সেবার জন্য প্রয়োজন ভালোবাসা ও আকাশ ছোঁয়া একটি হৃদয়। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যাদের মন পৃথিবীর চেয়ে অনেক বেশি বড়। এ সব মানুষ স্বপ্নের চেয়ে বড়। মানব প্রেম, মানবিকতার কাছে হার মানে শ্রমজীবী মানুষের দারিদ্রতা। অন্যের মুখে হাসি ফুটাতে বিসর্জন দেয় নিজের বুননকরা স্বপ্নকে। এসব মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব বেশি নেই, একদমই হাতে গোনা। প্রচারবিমুখ এসব মানুষগুলোর সমাজপতি হওয়ারও ইচ্ছে নেই।

কাপাসিয়া উপজেলার টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের দিনমজুর সোহরাব উদ্দীন তাদেরই একজন। সোহরাব উদ্দীন পেশায় একজন রিক্সাচালক হলেও মহানুভবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে কাঁচা লংকা আর পেঁয়াজ দিয়ে এক প্লেট পান্তা খেয়েই রিকশা নিয়ে বের হোন তিনি। দিন আনে দিন খায় সোহরাব। ৫ সদস্যের সংসার নিয়ে অতি কষ্টে জীবন চলে তাঁর। সারাদিনে রোজগার হয় মাত্র ৩শ থেকে ৪শ টাকা। এ টাকা দিয়ে সংসারের খরচ সামলে সঞ্চয় করেন কিছু টাকা। স্বপ্ন তার ভাল একটি ঘর বানানোর। দুই মেয়ে, ১ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে মাথাগোজারই ঠাই নেই তার । তাই কোনরকম বেঁচে থাকার জন্য একটি ঘর খুব প্রয়োজন সোহরাব উদ্দীনের। বাড়ি ভিটাছাড়া জায়গা জমি বলতে তেমন কিছুই নেই তার ।

১৫ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে ঘর বানানোর জন্য জমিয়েছেন ২৬ হাজার টাকা। রিক্সাচালক সোহরাবের স্বপ্নের মাঝখানে বাধা হয়ে দাড়ালো করোনা। প্রাণঘাতী করোনাভা’ইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ঘরবন্ধী কর্মহীন মানুষ। হতদরিদ্র মানুষের কষ্ট বেড়ে গেলো। তিনিও কর্মহীনদের মতো অসহায় হয়ে গেলেন । তার মতো কর্মহীন অসহায় হয়ে পড়েছেন গ্রামের আরো অনেকে। তাদের ঘরে দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। এলাকায় দিন আনে দিন খায় এমনসব মানুষকে তিনি চিনেন জানেন। তাদের দুঃখ, দুর্দশা সম্পর্কে তিনি খুবই অবহিত। কর্মহীন এ সব দিনমজুর হতদরিদ্র মানুষের অনেকের ঘরে চাল নেই, ডাল নেই। নেই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী। অনেকের ঘরে ছোট্ট শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা অভুক্ত । মানুষের এ ক্রান্তিলগ্নে, মানুষের এ দুঃসময়ে স্থির থাকতে পারেননি মানব দরদী রিকশাওয়ালা সোহরাব। নিজের কোন আয় অবলম্বন না থাকলেও অন্যের দুঃখে তার চিন্তার যেন শেষ নেই। এমন অবস্থায় টিনের ঘর বানানোর জন্য জমানো ২৬ হাজার টাকা দিয়ে অসহায় ১২০ পরিবারকে খাবার কিনে দিলেন রিকশাচালক সোহরাব উদ্দীন।

গাজীপুরের কাপাসিয়ার টোক ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের অসহায় ১২০ টি পরিবারে চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী শুক্রবার রাতে তিনি নিজেই বহন করে পৌঁছে দেন। এমন ঘটনায় উপজেলার বিভিন্ন মহল থেকে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।রিকশাচালক সোহরাব উদ্দীন বলেন, আমার ঘর হয়তো পরেও করা যাবে। অসহায় মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তাদের জন্য ১০ বস্তা চাল কিনেছি। টাকা থাকলে আরো বেশি পরিবারকে খাবার দিতাম। আমার কাছে টাকা থাকলে আমার গ্রামের মানুষ না খেয়ে থাকবে কেন? তিনি বলেন, রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *