স্বামীকে নিরাপদে হ’ত্যা করতে দরগায় ছাগল মানত !!

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বরগুনা সদর উপজেলার নাসির উদ্দিন গত বছরের ২৩ মে রাতে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ৯ মাস পর জানা গেল স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, বরং স্ত্রী ও তার পরকীয়া প্রেমিকের হাতে খু’ন হয়েছিলেন তিনি। একটি হারিয়ে যাওয়া ফোনের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে সামনে এসেছে এই হ’ত্যারহস্য।

রেকর্ডে স্বামীকে নিরাপদে খু’ন করতে পরকীয়া প্রেমিকের সাথে ফোন আলাপে ছাগল মানত করার কথা বলতে শোনা যায় ওই শিক্ষকের স্ত্রী ফাতেমা মিতুকে| প্রেমিক রাজুকে মিতু বলে, ‘দরগায় মানত করছি আল্লাহ কামডা যদি সফল হয়, কোনো সাক্ষী-প্রমাণ কিছু না থাকে, তাহলে হের লগে দরগাই যাইয়া এক সপ্তাহের মধ্যে একটা ছাগল কুরবানি দিমু, আল্লাহ কবুল করো।’

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের গয়েজ উদ্দিনের ছেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দিন। তার স্ত্রী মিতুর কাছ থেকে নাসিরের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই তার লাশ দাফন সম্পন্ন করেন নাসিরের স্বজনরা।

এ ঘটনার ৯ মাস পর মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনে নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হ’ত্যার কথোপকথনে রেকর্ডিং পায় নাসিরের স্বজনরা। পরে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু (২৪) এবং মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজু মিয়াকে (২০) গ্রে’প্তার করে।গ্রে’প্তার ফাতেমা মিতু বরগুনা পৌরসভার থানাপাড়া এলাকার মো. মাহতাব হোসেনের মেয়ে এবং রাজু মিয়া ঢলুয়া ইউনিয়নের গুলবুনিয়া এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।

এ বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, গত বছরের ২৩ মে ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে নাসিরের মৃত্যুর খবর পান তার স্বজনরা। পরবর্তী সময়ে নাসিরের স্বাভাবিক মৃত্যু জেনে তাকে স্বাভাবিক নিয়মেই দাফন করে স্বজনরা। ঘটনার আট মাস ১৯ দিন পর তার স্বজনরা জানতে পারেন নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজু নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে কম্বল চেপে শ্বাসরোধে হ’ত্যা করেন।

এ ঘটনায় নাসিরের বড় ভাই মো. জলিল হাওলাদার বরগুনা সদর থানায় অভিযোগ করলে তদন্তে নামে পুলিশ। পরে তদন্তকালে ঘটনার প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়ায় নাসিরের স্ত্রী ফাতেমা মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজুকে গ্রে’প্তার করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফাতেমা মিতুর পরকীয়া প্রেমিক রাজুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বরগুনার একটি দোকানে চার্জ করাতে দেন রাজু। সেখান থেকে তার মোবাইলটি হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া ফোনে নাসিরকে হ’ত্যার পরিকল্পনা এবং পরবর্তী বিষয়ে রাজু ও মিতুর কথোপকথনের রেকর্ড জমা থাকে। পরে হারিয়ে যাওয়া ওই ফোনের কথোপকথন পায় নাসিরের স্বজনরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে থানায় অভিযোগ করেন নাসিরের বড় ভাই জলিল হাওলাদার। এ অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে রাজু ও মিতুকে গ্রে’প্তার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে নাসিরের বড় ভাই ও মামলার বাদী মো. জলিল হাওলাদার বলেন, মিতুর কাছ থেকে আমার ভাইয়ের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর খবর পাই। তখন আমাদের কোনো সন্দেহ হয়নি। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা নাসিরকে দাফন করি। এ ঘটনার ৯ মাসেরও বেশি সময় পর মিতু ও তার পরকীয়া প্রেমিক রাজুর মোবাইল ফোনে কথোপকথনের বেশ কয়েকটি রেকর্ড পাই আমরা। সেই রেকর্ডে নাসিরকে হ’ত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের কথোপকথন রয়েছে। তখন আমরা নাসিরকে পরিকল্পিতভাবে হ’ত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এরপর পুলিশে অভিযোগ করা হলে পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রে’প্তার করে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসির এবং মিতু দম্পতি দুই সন্তানের জনক-জননী। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে মেয়ে বড় এবং ছেলে ছোট। আট বছর বয়সী মেয়ের নাম নুসরাত জাহান এবং পাঁচ বছর বয়সী ছেলের নাম মো. নাঈম।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *