হেলিকপ্টারে উড়ে যেভাবে প্র’তারণা করতো এই রুবেল !!
Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/bn.ekusherbangladesh.com.bd/public_html/wp-content/plugins/one-user-avatar/includes/class-wp-user-avatar-functions.php on line 798
Warning: Trying to access array offset on value of type bool in /home/bn.ekusherbangladesh.com.bd/public_html/wp-content/plugins/one-user-avatar/includes/class-wp-user-avatar-functions.php on line 798

যাতায়াতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতেন তিনি। নিজেকে অনন্যসাধারণ হিসেবে তুলে ধরতেই ছিল তার এমন আয়োজন। এতে করে দ্রুততর সময়েই তাকে আস্থায় নিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা। ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাই ছিলেন তার প্রধান টার্গেট। নিজেকে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর পরিচয় দিয়ে বিপুল পরিমাণ ফান্ড সংগ্রহ করার প্রলোভন দিয়ে কমিশন হিসেবে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। রুবেল আহম্মেদ নামের এই ভয়ংকর প্র’তারকের হাতে সর্বস্ব তুলে দিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন ভুক্তভোগীরা।
তবে এরই মধ্যে রুবেলকে নিজেদের কবজায় নিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ইকোনমিক অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিমের সদস্যরা। রবিবার দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল তাকে গ্রেফতার করে। সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রুবেলের প্র’তারণার কৌশল যেন সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। জনপ্রতিনিধিরাই ছিলেন তার টার্গেট। তার কাছ থেকে বিদেশি একটি সংস্থার ভুয়া কাগজপত্র, সিল, প্যাড উদ্ধার করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক কিছুই হয়তো বেরিয়ে আসবে এমন প্রত্যাশা করছি।
তিনি আরও বলেন, রুবেলের কাছ থেকে যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে তাতেও তার বাবার নাম দুই ধরনের পাওয়া গেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম-ঠিকানা ঠিক থাকলেও পাসপোর্টে নিজের খালুর নাম বাবার নামের জায়গায় বসিয়েছেন।সিটিটিসি সূত্র বলছে, রুবেল আহম্মেদ সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার ৩ নম্বর বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে জলবায়ুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার, দারিদ্র্যপীড়িত লোকের তালিকা প্রস্তুত করেন। প্রথমে তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, তার কাছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার একটি অনুদান রয়েছে। এই অর্থ গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র মানুষের আবাসন, স্কুল নির্মাণ, নদীভাঙন রক্ষাবাঁধ নির্মাণ, কৃষকদের গভীর নলকূপ ও দুস্থদের চিকিৎসাসেবার কাজে দেওয়া হবে। তার কথার ফুলঝুরিতে মুগ্ধ হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দরিদ্র ২০০ জনের একটি তালিকা তৈরি করেন।
সিটিটিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, রুবেল আহম্মেদ নিজেকে কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন নামে একটি সংস্থার বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দিতেন। উত্তরার একটি হোটেল কাম বাসার কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন। হোটেলটির অবস্থান রাজধানীর উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে। কুষ্টিয়া থেকে যারা আসতেন তাদের সঙ্গে ওই কক্ষেই তিনি সাক্ষাৎ ও আলোচনা করতেন। এর আগে লিটন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে একটি এনজিওতে কিছুদিন চাকরি করেছেন তিনি। সূত্র আরও জানায়, এলাকার মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য রুবেল প্রাথমিকভাবে কিছু ইট ক্রয় করে এবং স্থানীয় এক ব্যক্তির জমি ক্রয়ের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বায়নাও করেন। এসব কাজ তদারকী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে মিটিং করার জন্য তিনি ঢাকা থেকে তিনবার হেলিকপ্টার নিয়ে কুষ্টিয়ায় ভ্রমণ করেন।
পরবর্তীতে প্রজেক্টের অর্থ ছাড় করানোর জন্য আড়াই শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনজিও ব্যুরোর কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানান। একই সঙ্গে প্রজেক্ট থেকে অর্ধেক অর্থ ব্যয় করে বাকি অর্ধেক তারা মুনাফা হিসেবে ভাগ করে নিতে পারবে বলে প্রলোভন দেখান। রুবেলের এমন প্রস্তাব লুফে নিয়ে তারা ৪৩ লাখ টাকা তুলে দেয়। এর কয়েক দিনের মধ্যে রুবেল মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভয়ংকর প্র’তারক রুবেল একই কৌশলে এর আগে মাগুরা ও খাগড়াছড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্র’তারণা করে আত্মসাৎ করেন। তিনি ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় গিয়ে দেড় বছর অবস্থান করার পর দেশে চলে আসেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। রাজধানী ছাড়াও কুষ্টিয়া, মাগুরা ও খাগড়াছড়িতে তার বিরুদ্ধে একাধিক প্র’তারণার মা’মলা রয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।