হে আল্লাহ, করোনামুক্ত রমজান দান করুন !!

রহমতের বার্তাবাতী মাস রমজান সমাগত। রহমতের মাসে করোনামুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর জন্য নির্ধারিত ইবাদত রোজা পালনই মুমিন মুসলমানের একান্ত কামনা। তাই সামনে আগত রমজানে মহান আল্লাহর প্রতিদান লাভে ম’হামা’রিমুক্ত রমজান কামনায় হৃদয়ের গভীর থেকে আল্লাহর কাছে মুমিনের আকুতিভরা প্রার্থনা-

اَللَّهُمَّ سَلِّمْنِا لِرَمَضَان

আল্লাহুম্মা সাল্লিমনি লিরমাদান। অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রমজানকে শান্তিময় করে দিন। ম’হামা’রিমুক্ত শান্তিময় রমজানই তোমার কাছে চাই হে প্রভু!এ মাসটি মূলত মহান আল্লাহর মাস। এর প্রতিদান তিনি নিজেই দেবেন। ম’হামা’রি করোনার কারণে অন্য সময়ের তুলনায় প্রায় সব মানুষই ধর্মের প্রতি বেশি মনোযোগী। তাই ম’হামা’রির এ সময়ে রমজান উপলক্ষে দেয়া বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুসংবাদগুলো হতে পারে কার্যকরী। কেননা বিশ্বনবির সুসংবাদ গ্রহণ ও হাদিসে উল্লেখিত দোয়াগুলোই মুমিনের শেষ ভরসা।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উম্মতের জন্য সুসংবাদ দিয়ে) ঘোষণা করেন, যখন রমজান মাস আসে তখন আকাশের (রহমতের) দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্নভাবে সাহাবায়ে কেরামকে রমজানের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করতেন। নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে রমজানের আগে পরিপূর্ণ কল্যাণ লাভের পরামর্শ দিতেন। একাধিক হাদিসে রমজানের নির্বিঘ্ন ইবাদতের গ্যারান্টির বিষয়টি সুস্পষ্ট করা হয়েছে-

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘বরকতময় মাস রমজান তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। মাসজুড়ে রোজা পালন আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজা খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। দুষ্টু শয়তানদের এ মাসে আটক করে রাখা হয়। এ মাসে আল্লাহ তাআলা একটি রাত রেখেছেন, যা হাজার মাস হতে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো (ম’হাকল্যাণ থেকে)।’ (নাসাঈ)

নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল ইবাদতের জন্য রমজান মুমিন মুসলমানের জন্য নেয়ামতস্বরূপ। উম্মতের জন্য এ নেয়ামতের সুসংবাদই দিয়েছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কোনো মুমিন রোজাদারকে শয়তান প্ররোচনা দিতে পারবে না। বিষয়টি এভাবে ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি।

– হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের প্রথম রাতে শয়তান ও দুষ্ট জিনদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না। খুলে দেয়া হয় জান্নাতের দরজাসমূহ, এর একটি দরজাও বন্ধ করা হয় না। একজন আহ্বানকারী সুসংবাদ ঘোষণা করতে থাকেন-
‘হে কল্যাণের প্রত্যাশী! (নেক আমলে) অগ্রসর হও। হে অকল্যাণের প্রত্যাশী! (বদ আমল থেকে) বিরত হও।’
আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতেই জাহান্নাম থেকে অনেক মানুষকে মুক্তি দিতে থাকেন।’ (তিরমিজি)

ম’হামা’রি করোনা প্রাদুর্ভারে এ সময়ে মুমিন মুসলমানের জন্য আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া খুবই জরুরি। মুমিন মুসলমানের ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান সমাগত। এ রমজানের পরিপূর্ণ রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভে প্রস্তুতি নেয়ার সময় এখনই।

>> আল্লাহর কাছে জীবনের সার্বিক কল্যাণে এ দোয়া বেশি বেশি করি-

اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَلُكَ الْهُدَى وَ التُّقَى وَ الْعَفَافَ وَالْغِنَى

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াত্তুক্বা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।

>> করোনা থেকে মুক্তি লাভে এ দোয়াগুলোও বেশি বেশি পড়া-

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আ’ক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’

>> দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে এ দোয়া পড়া

اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَىَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي ‏”‏ ‏.‏ قَالَ وَكِيعٌ يَعْنِي الْخَسْفَ

 ‏উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাহফাজনি মিন বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া আন শিমালি ওয়া মিন ফাওক্বি ওয়া আউজুবিকা আন উগতালা মিন তাহতি ক্বালা ওয়াকিয়ুই ইয়ানিল খাসফা।’ অর্থ : ‘হে আল্লাহ্‌! আমাকে সামনে থেকে পেছনে থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে ও আমার উপরের দিক থেকে আমাকে হেফাজত করো। আমি তোমার নিকট আমার নিচের দিক দিয়ে আমাকে ধ্বসিয়ে দেয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।’ (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)

 

>> যে কোনো খারাবি তথা মন্দ থেকে মুক্ত থাকতে এ দোয়া পড়া
 

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিং শার্‌রি মা খালাক্বা।’ (মুসলিম) অর্থ : ‘আমি আল্লাহর সব পূর্ণ কালেমাসমূহের উসিলায়, তাঁর সৃষ্ট সব (জীবাণুর/খারাবির) অনিষ্টতা থেকে তারই কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’

>> রমজান লাভের এ দোয়াও বেশি বেশি পড়া-

اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থ : হে আল্লাহ! শাবান মাসের বরকত দান করুন আর আমাদের রমজানে পৌছে দিন।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের আগমনের সুসংবাদ গ্রহণ করে ইবাদত-বন্দেগির জন্য নিজেকে যথাযথভাবে প্রস্তুতি করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের সুসংবাদ অনুযায়ী দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন।

হে আল্লাহ! রমজানের রহমত বরকতের ওসিলায় ম’হামা’রি করোনায় বিশ্বমানবতার প্রতি আপনার রহমত নাজিল করুন। আমিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *