১৩ হাজার ফোন পেয়ে নড়েনি দিল্লি পুলিশ , এখন লাশও আটকে রাখছে !!

ভারতীয় গণমাধ্যম এই সময়ের সাংবাদিক অরিন্দম ব্যানার্জি দিল্লির মৌজপুরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশনে নামা মাত্রই ধ্বংস-মৃত্যু-আগুনের সাক্ষী হওয়ার শঙ্কা জাগে তার! সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে তিনি পৌঁছে যান বড় একটা জায়গায়। সেখানে দেখেন, কয়েকশ মুসলিম বিরাট চওড়া রাস্তার এক ধারে বসে নমাজ পড়ছেন আর তাদের সামনে টাঙানো রয়েছে ভারতের জাতীয় পতাকা। কয়েক দিন আগেই উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদের ওই জায়গায় দেখা গেছে তুমুল উত্তেজনা। সে সব নেই এখন। দূরে দাঁড়িয়ে দিল্লি পুলিশের বিশাল বাহিনী। পাঁচ দিন ধরে লাগাতার হিংসার ভয়ানক স্মৃতি কমে আসে অরিন্দমের। তিনি অনুভব করেন, ছন্দে ফিরছে রাজধানী। জাফরাবাদের মতো ভজনপুরা, গোকুলপুরীতেও গতকাল শুক্রবারের নামাজ-পর্ব মিটেছে শান্তিতে।

তবে এ কয়েকদিনে ৪৩ জনের তাজা প্রাণ চলে গেছে। ১০ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা শিথিল করা হয়েছিল গতকাল। সেই সুযোগে নতুন করে অশান্তি ছড়ানোর শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিস্তীর্ণ এলাকায় খুলেছিল কিছু দোকানপাট। শুক্রবার সকালে সপরিবারে রাস্তায় নেমেছিলেন মুস্তাফাবাদ, গোকুলপুরী, শিববিহার, ভাগীরথী বিহার, করাওলনগর, জাফরাবাদের বাসিন্দারা। পথে নেমেই দিল্লি পুলিশের ভূমিকাকেও বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন এই নাগরিকরা।

তাদের অভিযোগ, বিপদের সময়ে বার বার দিল্লি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে ফোন করেও কোনো সাহায্য মেলেনি। দিল্লি পুলিশ সূত্র বলছে- ২৪,২৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের থেকে জরুরি সহায়তা চেয়ে বিপদগ্রস্তরা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করেছেন মোট ১৩ হাজার দু’শ বার। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৎক্ষণাৎ সাহায্য পাঠানো দূরের কথা, অধিকাংশ কলের উত্তরই দেয়নি কন্ট্রোল রুম। অভিযোগের পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শিববিহারে তিনটি স্কুল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সঙ্কটে পড়েছে। ওই সময় সাহায্য চেয়েও স্কুল-কর্তৃপক্ষ পুলিশের সাড়া পাননি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার প্রমাণ মিলল গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালেও।

উত্তর-পূর্ব দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে গোষ্ঠী সংঘর্ষে নিহতদের মরদেহের মাত্র ১৩টির ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হয়েছে। সেটাও সব দেহ হস্তান্তর করা যায়নি পরিবারের কাছে। স্বজন-হারানো মুস্তাফা বলেন, হাসপাতাল থেকে বলছে থানায় গিয়ে আইও-র (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সঙ্গে কথা বলতে। বার বার যাচ্ছি, আইও-র দেখা পাচ্ছি না। দেখা পেলেও তিনি বলছেন, ফাইল তৈরি হয়নি। কবে হবে, তাও বলছেন না। এর পরে যখন দেহ পাব, তখন তা এতটাই বিকৃত হয়ে যাবে যে শেষ শ্রদ্ধাটাও ঠিক ভাবে জানানো যাবে না।
জিটিবি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে পুলিশি ফর্মালিটি প্রচুর। নিহতের দেহে গুলি বিঁধে আছে, কাউকে কোপানো হয়েছে ধারালো অস্ত্রে। রয়েছে অগ্নিদদ্ধ দেহ। এইসব দেহের ময়নাতদন্তে পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না হলে আমরাইবা কী করতে পারি! সূত্র: কালের কণ্ঠ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *