Internation News

৭ শতাধিক কর্মী চীনে আটকা – পদ্মা সেতুসহ ছয় প্রকল্পের কাজ ব্যাহত !!

পদ্মা সেতুসহ দেশের ছয়টি বড় প্রকল্পে কর্মরত সাত শতাধিক চীনা নাগরিককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে ফিরতে নিষেধ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। চীনা নববর্ষ উদযাপনসহ নানা কারণে এরা ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে চীনে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এসব প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশে ফিরতে নিষেধের পাশাপাশি বর্তমানে প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের চলাচল এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে কিছু বিধি-নিষেধ আনা হয়েছে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাসহ এসব প্রকল্পে স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ চিকিৎসা কেন্দ্র। তবে এখন পর্যন্ত এই ছয় প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিংবা শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

দেশের অন্যতম বড় পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিক এক হাজার ১৫০ জনের মতো। সেতু প্রকল্পে মেজর ব্রিজসহ চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি কাজ করছে। দুই প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ১৫০ জনের মধ্যে বর্তমানে ৩২৩ জন ছুটিতে চীনে রয়েছেন। ২৫ জানুয়ারিকে নববর্ষ ধরে নতুন বছর বরণের উৎসব হয় চীনে। মূলত এই আয়োজনকে কেন্দ্র করেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত চীনা নাগরিকরা দেশে ফিরে যান। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের একটি বড় অংশ জানুয়ারির শুরুতে দেশে ফিরে যান।

চলতি মাসে তাদের বাংলাদেশে ফেরার কথা থাকলেও এই মুহূর্তে তাঁরা ফিরতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের। কেবল এই ৩২৩ চীনা নাগরিকই নন, তাদের সঙ্গে সেখানে আটকা পড়েছেন আরো পাঁচ বাংলাদেশি, যারা সেতু প্রকল্পের কাজে চীনে গিয়েছিলেন।

দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, ‘এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে তাদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রকল্প এলাকায় কর্মরত চীনা নাগরিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদেরকে প্রকল্প এলাকায় এসে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া এখানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের দেশে যাওয়ার অনুমতিও আপাতত দেওয়া হচ্ছে না।’

পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত চীনসহ বাংলাদেশি নাগরিকদের কারো মধ্যে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিংবা শঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে সেখানে কর্মরত অক্যুপেশনাল অ্যান্ড হেলথ স্পেশালিস্ট মাহমুদ হোসেন ফারুক বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে বেশকিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। এখানকার সব কর্মীর মধ্যে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। চীনা এবং বাংলাদেশি কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে। করমর্দনের মতো কর্মকাণ্ডগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া সবাইকে নিয়ে স্বাস্থ্যসভা করার পাশাপাশি সার্ভিস এরিয়ায় স্থাপন করা হয়েছে চারটি চিকিৎসাকেন্দ্র।’

বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীনা নাগরিক কাজ করেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডে। এখানে কর্মরত চীনা নাগরিকের সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। চীনা নববর্ষ উপলক্ষে এখান থেকে ছুটি নিয়ে চীনে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। চলতি মাসেই এদের বাংলাদেশে ফিরে কাজে যোগ দেওয়ার কথা।

পায়রা তাপ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা বলেন, ‘ছুটি নিয়ে চীনে থাকা ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপাতত দেশে ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও জরুরি ভিত্তিতে যদি কেউ বাংলাদেশে আসতে চান তবে তাকে অবশ্যই চীন থেকে সুস্থতার স্বাস্থ্য সনদ নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে আসার পরও সম্মুখীন হতে হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার। তবে এই মুহূর্তে তাদের না ফেরার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা।’

তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে কলাপাড়ার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হালদার বলেন, ‘তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি মঙ্গলবার স্বাস্থ্যসভা করেছি আমরা। সেখানে চীনা নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশি শ্রমিকদের দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল এবং মাস্ক ব্যবহারসহ বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশার কথা হলো এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রে করোনাভাইরাস কিংবা উপসর্গ আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। আমরা সেখানকার সবকিছুর প্রতি নজর রাখছি। বর্তমানে চীনে থাকা কর্মীরা না ফিরলে আশা করছি আশঙ্কা করার মতো কিছু ঘটবে না।’

দক্ষিণাঞ্চলের আরেক উন্নয়ন প্রকল্প পায়রা নদীর লেবুখালী পয়েন্টে নির্মাণাধীন পায়রা সেতু প্রকল্পেও কাজ করছেন চীনা নাগরিকরা। চীনের হারবিন প্রদেশের লোং ঝিয়াং রোড অ্যান্ড ব্রিজ কোম্পানি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করছেন এই সেতু প্রকল্পে। এখানে কর্মরত ৮০ থেকে ৯০ জন চীনা নাগরিকের মধ্যে চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন ১২ জন। এর মধ্যে ছয়জন ফোরম্যান, বাকিরা প্রকৌশলী।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ছয়জন ফোরম্যানের বাংলাদেশে ফেরার কথা থাকলেও তাদের আপাতত বাংলাদেশে আসতে নিষেধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই সেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক নূরে আলম জুয়েল। তিনি বলেন, ‘যারা ছুটিতে আছেন তাঁরা আপাতত না ফিরলেও নির্মাণ কাজে কোনো ব্যাঘাত হবে না।’

নূরে আলম জুয়েল বলেন, ‘দেশি ও চীনা নাগরিকদের মধ্যে বর্তমানে দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে মাস্ক। তা ছাড়া প্রকল্পে কর্মরতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি।’

উল্লেখিত তিন প্রকল্পের পাশাপাশি আরো তিনটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পে চীনা নাগরিকরা রয়েছেন। এগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাইপাস এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।

ঢাকা বাইপাস প্রকল্পে ৫০ জন চীনা নাগরিক কর্মরত থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন মাত্র দুজন। এই প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে ছুটি নিয়ে চীনে থাকা বাকি ৪৮ জনের চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে ফেরার কথা থাকলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফিরতে নিষেধ করা হয়েছে।’

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত প্রায় ১০০ চীনা নাগরিকের কেউ বর্তমানে বাংলাদেশে নেই জানিয়ে এ প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছি। সবকিছু ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব ফর্মালিটিজ অনুসরণ করতে বলেছি।’

এ ছাড়া কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পে কর্মরত চীনা নাগরিকদের ক্ষেত্রেও একই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা।

J A Suhag

Local News: J A Suhag writes Local News articles for industries that want to see their Google search rankings surge. His articles have appeared in a number of sites. His articles focus on enlightening with informative Services sector needs. he holds the degree of Masters in Business and Marketing. Before he started writing, he experimented with various professions: computer programming, assistant marker, Digital marketing, and others. But his favorite job is writing that he is now doing full-time. Address: 44/8 - North Dhanmondi, Dhaka Email: [email protected]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button