জেনে নিন, কোথায় কতটা করোনা সং’ক্রমণের ঝুঁ’কি ??
করোনা সং’ক্রমণ দিন দিনই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে গবেষণাও। প্রতিনিয়তই বিজ্ঞানীর নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন এই ভা’ইরাস নিয়ে। গবেষষণায় দেখা গেছে, ভা’ইরাসটি জিনিসপত্রের মাধ্যমে যতটা না ছড়ায়, তার চেয়ে অনেক বেশি ছড়ায় মানুষ থেকে মানুষে। আমেরিকার ‘সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’(সিডিসি) কীভাবে করোনা সং’ক্রমণ ছড়াতে পারে তা নিয়ে গবেষণাতে ও এই একই দাবি করেছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে করোনা ভা’ইরাস ছড়ানোর হার কেমন, ঝুঁ’কি কোথায় কতটা কম বা বেশি এই নিয়েও নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে সিডিসি। সেখানকার গবেষকরা বলছেন, মানুষে-মানুষে সংস্পর্শ থেকেই এই ভা’ইরাস বেশি করে ছড়ায়। তবে সেই সংস্পর্শেরও নানা প্রকারভেদ আছে। তাদের মতে, হাতে হাত লাগায়ে এই ভা’ইরাস যেমন করে ছড়াবে, হাঁচি বা কাশি থেকে ছড়াবে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোনও বাইরের বাক্স বা অনলাইনে আসা গিফট নেওয়া নেয়া থেকে সং’ক্রমণ ততটা ছড়ায় না। তার চেয়ে একজন সং’ক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে আসলে ঝুঁ’কি অনেক বেড়ে যায়। তাদের মতে, কোনও আলমারি ও ড্রয়ার জাতীয় জিনিসে এই ভা’ইরাস প্রায় ২৪ ঘণ্টা বেঁ’চে থাকে। ধাতু ও প্লাস্টিকে বাঁ’চে প্রায় তিন দিন। কিন্তু আশ্রয় নেওয়ার মতো শরীর না পেলে এই ভা’ইরাস ততটা ভ’য়ঙ্ক’র হয়ে উঠতে পারে না।
এ কারণে বিশেষজ্ঞরা করোনা র সং’ক্রম’ণ এড়াতে মানুষে সঙ্গে মানুষের দূরত্ব রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন বারবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা এড়াতে হাত ধোয়া ও মাস্ক অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। এছাড়া বাইরে থেকে ফিরে ভালোভাবে গোসল করতে হবে।তাদের ভাষায়, হাতে ভা’ইরাস লাগলে সেই হাত চোখে-মুখে-নাকে দিলে ভা’ইরাস শরীরে ঢুকবে। এ কারণে চোখে-নাকে-মুখে হাত দেওয়া নিয়েও সচেতনতা বজায় রাখতে হবে।
সিডিসি-র মতে, এক জন সুস্থ মানুষকে আ’ক্রা’ন্ত করার জন্য ১ হাজার ভা’ইরাল পার্টিকল প্রয়োজন। সং’ক্রাম’ক ব্যক্তির শ্বাস থেকে প্রতি মিনিটে ২০ ভা’ইরাল পার্টিকল বেরয়। সুতরাং ৫০ মিনিট তার শ্বাসের কাছাকাছি থাক’লেই যে কেউ আ’ক্রা’ন্ত হতে পারেন এই ভা’ইরাসে। কিন্তু মাস্ক পরলে সে সম্ভাবনা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কমে যায়। গবেষকরা বলছেন, চার পাশে যেহেতু অনেক উপসর্গবিহীন রোগী রয়েছেন এ কারণে মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপারে আরও জোর দিতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কথা বললে যে অদৃশ্য ড্রপলেট বের হয় তাতে প্রতি মিনিটে ২০০ ভা’ইরাল পার্টিকল বের হয়। ফলে আ’ক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মাস্ক ছাড়া ৫ মিনিট কথা বললেই আরেকজন আ’ক্রা’ন্ত হতে পারেন কোভিডে-১৯ এ। কিন্তু মাস্ক পরে চার মিনিটও কথা বললেও সেই ঝুঁ’কি অনেকটা কমে যায়।
এছাড়া গবেষণায় এটাও দেখা গেছে, আ’ক্রা’ন্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে প্রতি মিনিটে ২০ কোটি ভা’ইরাল পার্টিকল বের হয়। এই পার্টিকলগুলি প্রায় এক ঘণ্টা পর্যন্ত বাতাসে থাকে। এ কারণে বাইরে বরে হলেই মাস্ক পরা জরুরি।সিডিসির মতে, কোনও মানুষের সঙ্গে ৬ ফুট দূরত্ব নিয়ে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকলেও ঝুঁ’কি কম থাকে। মাস্ক পরে দু’জন কাছাকাছি দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪ মিনিট পর্যন্ত কথা বললেও সং’ক্রামিত হওয়ার ভয় নেই। এছাড়া আলো-বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় দু’জনের মধ্যে ৬ ফুট দূরত্বে থাকলেও আ’ক্রান্ত হওয়ার ঝুঁ’কি কম।
গবেষকরা বলছেন, রাস্তায় হাঁটার সময় যদি তার পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে, হেঁটে বা জগিং করে কোনও আ’ক্রান্ত ব্যক্তি যায় এবং যদি তিনি হাঁচি বা কাশি না দেন তাহলে ভয়ের কোনও কারণ নেই। তবে সব জায়গাতেই মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস করা জরুরি।গবেষকদের মতে, বদ্ধ জায়গা, দোকাটপাট, রেস্তোরাঁ থেকে সং’ক্রামিত হওয়ার ঝুঁ’কি বেশি। এ কারণে যতটা সম্ভব এসব জায়গা এড়িয়ে চলুন। আর গেলে অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
এছাড়া স্কুল-কলেজ, কনফারেন্স, অফিস, পাবলিক টয়লেট থেকে সং’ক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁ’কি কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিয়েবাড়ি, পার্টি, কোনও অনুষ্ঠান, ঘরোয়া জমায়েত, সিনেমা হল- এসব জায়গায় লোক জমায়েত বেশি হওয়ায় এখান থেকেও করোনা ছড়াতে পারে। তাই আগামী কয়েক মাস এসব স্থান এড়িয়ে চলতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। একান্তই যেতে হলে ঘন ঘন হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের অভ্যাস বজায় রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন তারা। উৎস : সমকাল।