বৈঠক বাতিল, ঢাকার পরিবর্তে দিল্লিতে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী !!
নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সুখবর আসছে- দেশটি সফর শেষে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত রোববার ছিল দুই দেশের যৌথ কমিটির বৈঠকের নির্ধারিত তারিখ। কিন্তু হঠাৎ করে বৈঠকটি স্থগিত করে মালয়েশিয়া। ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল।
ঢাকা বলছে, বৈঠক স্থগিতের বিস্তারিত কারণ জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশ সফর বাতিল করে বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারান। বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে তারই মালয়েশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল।
বৈঠক বাতিলের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বারণেই বৈঠকটি আপাতত স্থগিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে আশা করছি শিগগিরই বৈঠকের তারিখ পুনর্নির্ধারণ হবে।’
এ বিষয়ে বায়রা মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে কাজ হবে- এটা তো সিদ্ধান্ত হয়েই আছে। কিন্তু একটা প্রটোকল স্বাক্ষর হবে, সেই ব্যাপারটা নিয়ে দেরি হচ্ছে। আশা করছি, ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তারিখ পুনরায় নির্ধারিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ার কেবিনেট বলে দিয়েছে, তাদের ছয় লাখ কর্মী প্রয়োজন। সুতরাং সে দেশে কর্মী প্রয়োজন, এটা নিশ্চিত। কী প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে সেটিও মোটামুটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কথা হলো, কবে থেকে শুরু হবে কর্মী পাঠানো- সেটাই বিষয়।’
শামীম চৌধুরী বলেন, ‘ডিসেম্বরের মধ্যে শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু বৈঠকটি আপাতত হচ্ছে না। মালয়েশিয়া বলেনি প্রক্রিয়াটি বন্ধ করা হয়েছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে বৈঠকটি হবে।’
এদিকে ঢাকা ও কুয়ালালামপুর সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। এ কারণেই মূলত আরও সময় নিচ্ছে দেশটি।
বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বায়রার কয়েকজন নেতা জানান, দুদেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রভাবেই আবারও ঝুলে গেছে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারটির উন্মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া।
বায়রার এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাই বাজারটি উন্মুক্ত না হওয়ার প্রধান অন্তরায়।’
‘তারা যদি নাক না গলিয়ে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিত তাহলে…। আশা করি, মার্কেটটা দ্রুত খুলে যাবে’- বলেন তিনি।
উল্লেখ্য, সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় (জিটুজি প্লাস) ২০১৭ ও ২০১৮ সালে প্রায় পৌনে তিন লাখ কর্মী মালয়েশিয়া যান। সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় এক লাখ ৬০ হাজার টাকা হলেও কর্মীপ্রতি সাড়ে চার লাখ টাকা পর্যন্ত নেয় এজেন্সিগুলো। যারা সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিত পায়।
একটি সংঘবদ্ধচক্রের অনৈতিক ব্যবসা পরিচালনার কারণে বাংলাদেশের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।
চলতি বছরের ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। মন্ত্রীর বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, অভিবাসন ব্যয় কমাতে দুই দেশ একমত। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের দেশ ছাড়ার আগেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে। অধিক সংখ্যায় রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারবে। দুই দেশের মধ্যে যেসব আলোচনা হয়েছে, তা চূড়ান্ত করতে ২৪ ও ২৫ নভেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হবে।