যে দোয়া গুলি পড়লে যত বড় পাপেই হোক না কেন, আল্লাহ সাথে সাথে ক্ষমা করে দেন!
মানুষের সবচেয়ে কাছের মানুষ কে? কে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে? হাজার হাজার অবিচারের পরও কে মানুষকে খুশি করে? একটাই উত্তর- তিনি হলেন মহান রব। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে নানাভাবে ক্ষমা করেন। তিনি মানুষকে ক্ষমা করবেন, এটি তার প্রতিশ্রুতি। কারণ তিনি বারবার কুরআনে বিভিন্ন স্থানে নিজেকে ক্ষমাশীল হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
‘তিনি পরম দয়ালু, যারা তওবা করেন তাদের জন্য ক্ষমাশীল।’ (সূরা নূহ: আয়াত ১০)
উম্মতের করুণাময় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং ক্ষমা পাওয়ার প্রেক্ষাপটে হাদীছে এমন আশার বার্তা ব্যক্ত করেছেন।
বান্দা যা জানে, তার ক্ষমাশীল প্রভু আছে; কে ক্ষমা করে এবং শাস্তি দেয়!
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি যে, একজন বান্দা পাপ করেছে। তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু! আমি পাপ করেছি. অতএব তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর। তার প্রভু বলেছেন:
‘আমার বান্দা কি জানে যে তার একজন রব আছে; যিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং তাদের শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। অত:পর তিনি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং তিনি আবার পাপে লিপ্ত হন।
বান্দা আবার বলল, হে আমার প্রভু! আমি আবার পাপ করেছি। আমাকে এই পাপ ক্ষমা করুন। তখন আল্লাহ বললেন-
‘আমার চাকর কি জানত যে তার একটি রব আছে; যিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং তাদের শাস্তি দেন। অত:পর তিনি আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী কিছু সময় সেই অবস্থায় ছিলেন। আবার সে পাপে লিপ্ত হয়।
সে (দাস আবার) বলল, হে আমার প্রভু! আমি আরেকটি পাপ করেছি। আমাকে এই পাপ ক্ষমা করুন। তখন আল্লাহ বললেন-
আমার ভৃত্য কি জানত যে তার কণ্ঠস্বর আছে? যিনি পাপ ক্ষমা করেন এবং তাদের জন্য শাস্তি দেন। আমি আমার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। এই কথা তিনি তিনবার বলেছিলেন। ‘(বুখারী)
বান্দার প্রতি আল্লাহর ক্ষমা করার উদাহরণ এই হাদিসে উঠে এসেছে। অতএব, মানুষের উচিত কোন পাপ করার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং ক্ষমা চাওয়া। যে ব্যক্তি তার গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তওবা করে, আল্লাহ তাকে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করে দেন।
১. أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
নিয়ম: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পর তিনবার এই ইস্তেগফার পাঠ করতেন। (মিশকাত)
২. ْأَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছে ফিরে যাচ্ছি।
নিয়ম: এই ইস্তেগফার দিনে ৮০/১০০ বার পড়ুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিনে ৭০ বারের বেশি তওবা করতেন এবং ক্ষমা চাইতেন। (বুখারী)
3. رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ: ‘রাব্বি ফিরলি ওয়া তব আলাইয়া ইন্নাকা (আনত) তাওয়াবুর রহিম।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তওবা কবুল করুন। নিশ্চয় তুমি দয়ালু, মহান তওবা কবুলকারী। ‘
নিয়ম: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে এক বসা অবস্থায় ১০০ বার এই দোয়া পাঠ করেছিলেন। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, মিশকাত)
৪. أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: ‘আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, এবং তাঁরই দিকে আমি ফিরে যাচ্ছি (তওবা)।’
নিয়ম: দিনের যে কোন ইবাদতের সময় এইভাবে তওবা-ইসতেগফার করা অর্থাৎ ক্ষমা চাওয়া। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, যদি সে এভাবে তওবা করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলাতক। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত)