নিজ ঘরেই ফিরতে পারছে না সৌদি প্রবাসী ফেরত অনেক নারী !!
সৌদি গিয়ে দেশের ঘর ভাইঙ্গা দালান দিব। স্বামীকে বলেছিলেন, আমি বেতন পাঠাইলে ঘর ঠিক করবা না, ঘর ভাইঙ্গা দালান দিবা। কথাগুলো বলছিলেন সৌদি ফেরত সাভারের সোনিয়া। সেই সোনিয়া এখন নিজেই ঘরছাড়া। ফিরেছেন খালি হাতে। নিঃস্ব হয়ে। সোনিয়ার মতো শূন্য হাতে দেশে ফিরে নারী শ্রমিকরা পড়ছেন দুর্বিসহ জীবনে।
বাবা-মা ছাড়া পরিবারে প্রায় সবাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ভালো করে কথা বলেন না। কাল কী খাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। পাওনাদারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান। সোনিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ওখানে যৌন নির্যাতিত হয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছে কিন্তু আমি পারিনি সাধের এ জীবন শেষ করতে কিন্তু দেশে ফিরে এখন মনে হচ্ছে হয়তো আত্মহত্যা করতে হবে। তাদের পাশে নেই সরকারও। দুই-একটি বেসরকারি সংস্থা ছাড়া আর কোনো আশ্রয় নেই। এসব বেসরকারি সংস্থা তাদের মানসিক, আর্থিক, প্রশিক্ষণগত সহায়তা তো করছেই। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাও দিচ্ছে। বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক কেন্দ্রের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, সৌদি ফেরত বেশিরভাগ শ্রমিকই দেশে ফিরে পরিবারের কাছে যেতে চান না। আবার যারা যেতে চান তাদের অনেককেই পরিবার গ্রহণ করতে চায় না। তাদের এখন দরকার কাজ। দরকার মাথা গোঁজার ঠাঁই। মোট কথা তাদের পুনর্বাসিত করতে হবে।
তিনি বলেন, নারীদের শুধু বিদেশ পাঠিয়ে দিলেই চলবে না। ওখানকার সার্বিক অবস্থা সরকারকেই মনিটরিং করতে হবে। বিদেশ পাঠানো থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কাজের স্বচ্ছতা থাকতে হবে। তাদের পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সুরক্ষা, মর্যাদা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। সুমাইয়া জানান, তাদের হিসেবে দুই বছরে সাড়ে পাঁচ হাজার নারী শ্রমিক ফিরে এসেছে। তার সংস্থা ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা যাতে নেতৃত্ব দেওয়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারে। সংকটে নিজেকে শক্ত রাখতে পারে। পুনর্বাসিত করতে পারে নিজেকে, তাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ সংস্থা চিকিৎসা সেবাও দেয়। অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিয়েছে। চাকরি দেওয়া, পাওনা টাকা উদ্ধার করা। পাসপোর্ট ফেরত আনাসহ যারা আবার বিদেশ যেতে চায় তাদেরও সাহায্য করে অভিবাসী নারী শ্রমিক কেন্দ্র। অসহায় শ্রমিকদের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে চাকরির ব্যবস্থা করেছে এ কেন্দ্র, বিশেষ করে গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছে। সুমি নামে একজন অভিবাসী শ্রমিককে চাকরি দেওয়া হয়েছে। সুমি (৩২) এখন চাকরি করছেন একটি ফ্যাক্টরিতে। বেতন সাত হাজার টাকা।
সুমি জানান, সাত মাস তিনি সৌদি আরবের জেদ্দায় ছিলেন। ফিরেছেন খালি হাতে। এখন দুই মুঠো খেয়েপরে ভালো আছেন। নূরজাহান বেগমও চাকরি পেয়েছেন এ শ্রমিক কেন্দ্রের সহায়তায়। নূরজাহান সৌদি আরবের রিয়াদে ছিলেন দেড় বছর। এখন আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টে চাকরি করছেন। সিলেটের হবিগঞ্জের নাজমা সৌদি আরবের জেদ্দায় গিয়েছিলেন ভাগ্য ফেরাতে। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে তার জায়গা হয় জেলখানায়। নাজমা সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অভিবাসী নারী শ্রমিক কেন্দ্র ছয় মাস চেষ্টা করে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়। নাজমা এখন কাতারে গৃহকর্মী হিসেবে চাকরি করছেন। অভিবাসী নারী কেন্দ্র (বিএনএসকে) নাজমা ছাড়াও জর্ডানের জেলখানা থেকে আট নারী শ্রমিককে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে।
জর্ডানের সঙ্গে বিএনএসকের পার্টনারশিপের চুক্তির মাধ্যমেই তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। রিক্রুটিং এজেন্সির একজন মালিকের বিচারও হয়েছে; তিনি আর বিদেশে লোক পাঠাতে পারবেন না। এ ছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে ২১ নারী শ্রমিকের পাওনা টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা ১১০ অভিবাসী কর্মীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)। তাদের মধ্যে ৮৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা পূর্ণ বেতন পাননি। ৬১ শতাংশ শারীরিকভাবে নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। ২৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়নি ও ১৪ শতাংশ যৌন নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন। এ সংস্থা এ বছর ৩৬৪ জনকে পুনর্বাসনের আওতায় এনেছে। ৫০ জনকে আর্থিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ৩০ জনকে অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করেছে। এদের মধ্যে একজন নরসিংদীতে ডিমের ব্যবসা করছেন। সাতজনকে গবাদি পশু দেওয়া হয়েছে। আড়াই হাজার ও নরসিংদীতে গার্মেন্টে কাজ করছে ৩০ জন।