বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকছে মালদ্বীপ !!
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে মালদ্বীপের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উল্লেখ করার মতো নয়। তবে এবার পলিমাটি রপ্তানি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে চায় বাংলাদেশ। সরাসরি যোগাযোগের জন্য চায় উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি। আলোচনা চলছে জনশক্তি রপ্তানি নিয়েও। সম্পর্কের এই নতুন বাতাবরণে উৎসাহ দেখাচ্ছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটিও। সেই তাগিদ থেকেই অন্তত ৮টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি অন্তত এক ডজন ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে এগিয়ে আসছে মালদ্বীপ।
সম্পর্কের মোড় ঘোরাতে ফেব্রুয়ারিতেই ঢাকায় আসছেন মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী মাসের ৯ ও ১০ তারিখ মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। ওই সফরে দুই দেশের মধ্যে অন্তত ৮টি বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর এবং আলোচনার জন্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ইস্যু ছাড়াও সুনির্দিষ্ট আরও ১২টি ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- বিনিয়োগ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে সহায়তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ ইস্যুতে সহায়তা, স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহায়তা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন সহায়তা, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সহায়তা, তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে সহায়তা, বন্দী বিনিময় সহায়তা এবং অন্যান্য ইস্যু।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে আলোচনার জন্য যে ইস্যুগুলো রয়েছে এর মধ্যে ডাবল টেক্সেশন বা দ্বৈত কর প্রত্যাহার, মালদ্বীপে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি সম্প্রসারণ এবং মালদ্বীপে পলিমাটি রপ্তানির সম্ভাব্যতা যাচাই উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া করোনা মহামারী ঠেকাতে বাংলাদেশ থেকে পিপিইসহ চিকিৎসামগ্রী রপ্তানি নিয়েও দুই দেশের মধ্যে কাজ চলছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিকস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, স্যানিটারি পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও প্লাস্টিক পণ্যসহ আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছে। মালদ্বীপে এসব পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলেও জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আলোচনায় যে ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক : পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যে অন্তত ৮টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এগুলো হচ্ছে দ্বৈত কর প্রত্যাহার চুক্তি, জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে সমঝোতা স্মারক, সামুদ্রিক গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে সমঝোতা স্মারক, দুই দেশের মধ্যে বন্দী বিনিময় চুক্তি, পর্যটন সেবা ও উপকূলীয় জাহাজ চলাচলে সমঝোতা স্মারক, মালদ্বীপের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহায়তা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং মালদ্বীপে ৮০ জন নিবন্ধিত সেবিকার নিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি।
সূত্রগুলো জানায়, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও আলোচনার জন্য চিহ্নিত ইস্যুগুলো যেহেতু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সে কারণে এসব ইস্যুতে মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে মূল সমন্বয়ের কাজটি করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে ইস্যুগুলো চিহ্নিত করে এসব বিষয়ে অগ্রগতি জানতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে চিঠিও পাঠিয়েছে পররাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া উইং। সূত্রগুলো জানায়, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই মালদ্বীপের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটিতে জনশক্তি ও পণ্য রপ্তানি বাড়াতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ওপরও জোর দেয় বাংলাদেশ। বিপরীতে দ্বীপ দেশটি থেকে খুব বেশি সাড়া মেলেনি। এমনকি পররাষ্ট্র দফতরের বাজেট কমানোর অজুহাতে ২০১৪ সালে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। তবে এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কোন্নয়নে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মালদ্বীপের একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টে আগুন লেগে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ লিটার পানি পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্বীপ দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানোর ওপর সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর গত বছরের মে মাসে দেশটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে বন্ধুপ্রতিম মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের কাছে জরুরি ওষুধ, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাসামগ্রী পাঠানোর উদ্যোগ নেন। ২০ হাজার পিপিই সেট, ৫ হাজার হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ৯৬০টি নিরাপত্তা চশমা ও ৪০ কার্টন জরুরি ওষুধ ছাড়াও সেই সময় প্রায় ৮৫ টন খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টেলিফোনে আলোচনা করে দ্বীপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছান। ওই টেলি বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে পলিমাটি আমদানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে মালদ্বীপ। দুই দেশের মধ্যে উপকূলীয় জাহাজ চলাচলের বিষয়েও ঐকমত্য এসেছে।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।