করোনা বিষয়ে বিশ্বনবীর মিম্বর থেকে শাইখ সুদাইসের উপদেশ !!

করোনাভা’ইরাস এখন সবার মাঝে এক মহা আ’তঙ্ক ও আশংকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতির ভ’য়াবহতা উপলব্ধি করে শুরু থেকেই মুসলমানদের প্রধান দুই মসজিদে সাধারন মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত করা হয়েছে।

রোববার (৬ এপ্রিল) মক্কা ও মদিনা বিষয়ক অধিদফতরের প্রেসিডেন্ট ও মসজিদুল হারামের খতিব শাইখ ড. আব্দুর রহমান সুদাইস মদিনার মসজিদে নববীতে এশার নামাজের ইমামতি করেন।নামাজের পর তিনি বর্তমান বিপর্যস্ত বিশ্বের পরিস্থিতিকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। পাঠকদের জন্য শাইখ সুদাইসের পুরো বক্তব্য তুলে ধরা হল-

বর্তমান বিশ্বের সংকটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা সকলেই অবগত আছেন। সারা বিশ্ব আজ ধেয়ে আসা একটি ম’হাবিপদে আপতিত হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক মহা পরীক্ষা।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। (সূরা বাকারা-১৫৫)

দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাদের হারামাইনের এই পবিত্র ভূমিও আজ এ মুসিবতের অনুপ্রবেশ ও বিস্তার থেকে মুক্ত নয়। এই মুহূর্তে আমাদের সবাইকে আল্লাহর ফায়সালা ও সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকাই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি। (সূরা আল ক্বমার- ৪৯)

যে কোনো মুসিবত আল্লাহর নির্দেশে আপতিত হয়। যেগুলো তার মহিমান্বিত বাণীতে সুবিদিত হয়েছে, আল্লাহ্ ইরশাদ করেন, পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। (সূরা হাদীদ- ২২)শুনে রেখ! তারই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। (সূরা আরাফ- ৫৪)

তাই, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবার উচিত আল্লাহর প্রতি ঈমানকে দৃঢ় করা এবং তার ওপর ইতিবাচক ধারণা পোষন করা। আল্লাহ আমাদের বরকতদাতা, তিনিই মহান। সঙ্গে এই বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করা উচিত যে, আল্লাহর দিকে একনিষ্ঠ রূপে ফিরে যাওয়া ব্যতীত আমাদের আর কোন গন্তব্য নেই।

সমগ্র মুসলিম জাতির কর্তব্য হল এ ভা’ইরাস থেকে রেহাই পেতে সুরক্ষার যাবতীয় উপায় অবলম্বন করা এবং এটিকে প্রতিরোধে যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া। হারমাইনের পবিত্র এই দেশটিও শরীয়তের মূলনীতি বিবেচনায় নানা ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে। মনে রাখতে হবে, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরক্ষাই উত্তম।

সবমিলিয়ে নিজেদের সুস্থতার প্রতি সচেতন হতে হবে। কেননা আমরা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে প্রত্যেকই যার যার স্থানে দায়িত্বশীল। নিজেদের অধীনস্থদের বিষয়ে আমরা নিজেরা প্রশ্নের সম্মুখীন হবো। তাই প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করা উচিত। এটিই শরীয়তের দাবি।

কোয়ারেন্টিনের এই উদ্ভাবন শরীয়তের আলোকেই সাব্যস্ত। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। (সূরা বাকারা-১৯৫)

অন্যত্র আল্লাহ বলেন, তোমরা নিজেদের কাউকে হ’ত্যা করো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সূরা নিসা- ২৯)

আর আমরা কোনো ধরণের গুজব ও অপপ্রচারে কান না দিয়ে নিজেদের মাঝে আশাবাদের জাগরণ সৃষ্টি করব। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই এই শঙ্কা কেটে যাবে।তাই আমাদের জন্য উচিত হল অধিক পরিমাণে দোয়ায় মনযোগী হওয়া। কেননা এটি মুমীনের হাতিয়ার। আল্লাহ বলেন, তোমাদের পালকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি তাতে সাড়া দেবো। (সূরা মুমিন-৬০)

আর আমাদের আল্লাহর কাছে অনুনয়-বিনয় করা উচিত। আল্লাহর ইরশাদ, আর আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও পয়গাম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদেরকে অভাব-অনটন ও রোগ-ব্যাধি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম; যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। এরপর তাদের কাছে যখন আমার আজাব আসলো, তখন কেন কাকুতি-মিনতি করলো না? (সূরা আনআ’ম- ৪২-৪৩)

আর এটি সুবিদিত এবং পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম যে, মুসিবতে আল্লাহমুখী হলে তা তিনি দূরীভূত করে দেন।আর আমরা এখন মহিমান্বিত রমজানের একেবারে দ্বারপ্রান্তে। তাওবা ও ইস্তেগফারের মধ্য দিয়ে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং আগত মাসকে বরণ করে নেয়া এখন আমাদের প্রধান কাজ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *