ত্যাজ্যপুত্র করার সত্ত্বেও, অ্যাসিড আক্রান্ত প্রেমিকাকেই বিয়ে করলেন প্রেমিক !!

নদিয়ার মমতা সরকার ও তাঁর বয়ফ্রেন্ড উত্তরাখণ্ডের লাকি সিংঙের জীবনের যাত্রাপথে গোলাপ তো ছিলই না, বরং কাঁটা বেছানো ছিল। তবু চার বছর আগে মমতার মুখে ছোড়া অ্যাসিডের ‘কালিমা’ তাঁদের ভালোবাসায় আঁচ ফেলতে পারেনি। বরং সম্পর্ককে আরও মজবুত করে কলকাতায় এসে থাকা শুরু করেন লাকি।

একজন অ্যাসিড আক্রান্ত মেয়েকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিতে রাজি হয়নি তাঁর পরিবার। লাকিকে পরিবারের ত্যাজ্য পুত্রও ঘোষণা করা হয়। এত কিছু সত্ত্বেও ভালোবাসায় এতটুকু দাগ লাগেনি। বরং তা দিনদিন বেড়েই গিয়েছে।

এই ভ্যালেনটাইনস ডে-তে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত পাকা করে ফেলেছে এই জুটি। আগামী ১০ মার্চ বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছেন মমতা ও লাকি।২০০৪ সালে মায়ের সঙ্গে ঘুমোচ্ছিলেন মমতা। হঠাত্‍‌ই তাঁর মুখ জ্বলে-পুড়ে যায়। বুঝতে পারেন, তাঁর মুখে কোনও বিষাক্ত তরল ছোড়া হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘আমার বয়স তখন ১৩-১৪। সম্পত্তিজনিত কারণে আমাদের সঙ্গে শত্রুতা ছিল অপরাধীর। সে ভেবেছিল, এই ঘটনার ফলে আমাদের পরিবারের বদনাম হবে আর কেউ আমায় বিয়ে করবে না। আমি পরিবারের দুর্ভাগ্যের বোঝা হয়ে পড়ে থাকব। যদিও আমি বেঁচে গিয়েছি। আমি যখন চার বছর নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলাম, তখন অপরাধী জামিনে ছাড়াও পেয়ে যায়।’

তবে মমতা একদিন ঠিক করেন, তিনি সব অতীত ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে বাঁচবেন। তাঁর বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। এরই মাঝে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করে চাকরি পান তিনি। দুর্গাপুরে কাজ করতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় লাকির।

বছর ২৫-এর ছেলেটি বলেছেন, ‘ধীরে ধীরে ওকে ভালোবেসে ফেললাম। বরাবর বিশ্বাস করতাম, লুকই সব নয়। মানুষের আত্মাটাই সুন্দর হওয়া প্রয়োজন। আমি তাঁর আত্মাটাকে ভালোবেসে ফেললাম।’

দূরত্ব অনেকটাই ছিল। তবে ভালোবাসার টানে কলকাতায় এসে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন লাকি। তিনি জানিয়েছেন, ‘মমতার পাশে থাকব বলেই কলকাতায় একটা চাকরি নিই। আমার পরিবার আমার সিদ্ধান্তকে অশ্রদ্ধা করেনি। তবে মমতার সঙ্গে বিয়েটা মেনেও নেয়নি। তারা আমাকে ত্যাজ্য করেছে।’

আগামী ১০ মার্চ বিয়ে করছেন তাঁরা। মমতা জানালেন, ‘ভালোবাসার থেকে বিশ্বাস উঠে গিয়েছিল। ও তা ফিরিয়ে এনেছে। আমাকে বিয়েতে একটা লাল লেহেঙ্গা দিয়েছে। ওকে নিয়ে গ্রামে ফিরব। আশা করি, সবাই আমাদের গ্রহণ করবে।’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *