নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে ভারতকে চাপ দিল যুক্তরাষ্ট্র !!

ভারতের লোকসভায় বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব পাশ হওয়ার প্রেক্ষিতে এবার ভারতকে বিশেষ বার্তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে এ বার্তা দিয়েছে দেশটি। বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে কী কী ঘটছে, সেদিকে গভীরভাবে নজর রাখছি আমরা। ধর্মীয় স্বাধীনতায় শ্রদ্ধা এবং সবার সমানাধিকারই আমাদের দুই গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি।’

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘ভারত সরকার যেন সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা মাথায় রেখে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে, সেজন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’ এদিকে ভারতের সংসদের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিতর্কিত সিএবি পাস হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) এতে সই করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। এর ফলে বিলটি আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইন সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট বলে সমালোচনা চলছে ভারতেরই বিভিন্ন মহলে। নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের’ শিকার হয়ে যেসব অমুসলিম ভারতে এসেছেন, তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলে আর ভাবা হবে না, বরং তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সুশীল সমাজ বলছে, আইনটির মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সহজেই এ দেশের (ভারতের) নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন, আর তাতে সংকটে পড়বেন আদি বাসিন্দারা। তাছাড়া, নতুন আইনের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের নাগরিক সুরক্ষা উপেক্ষা করা হয়েছে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুরু থেকেই সিএবির(ক্যাব) প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে মার্কিন কংগ্রেসের একটি অংশ। জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির পর দেশের সংখ্যালঘুকে নিশানা করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মোদির সরকার সিএবি পাস করেছে বলে দাবি তাদের। তা নিয়ে এ সপ্তাহের শুরুতেই মোদি-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে সরব হয় যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)। বিলটি পাস হওয়ার আগে তারা জানায়, নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় মানদণ্ড বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক। সংসদের দুই কক্ষে বিলটি পাস হলে অমিত শাহ-সহ দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো উচিত মর্মে পররাষ্ট্র দফতরের কাছে সুপারিশও করে তারা।

এদিকে, নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশের পর সিএবি বিল পাসের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে আসাম, ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মানুষ। বিক্ষোভ-সংঘাত শুরু হলে সেনা মোতায়েন করা হয়, জারি করা হয় কারফিউ। কিন্তু সেনা পাঠিয়েও বিক্ষোভ দমন করা যাচ্ছে না। কলকাতা ও গৌহাটির সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, গত কয়েকদিনের বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত আসামে ৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু মানুষ। এর মধ্যেই চলছে বিক্ষোভ। সিএবি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপনকালে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অদ্ভূত বক্তব্য দেন। তিনি পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব দেশে লাখ লাখ মানুষের সঙ্গে ধর্মীয়ভাবে প্রতারণা করা হয়েছে। এ নিয়ে দ্বিমত স্পষ্ট করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তার বক্তব্যে অসন্তোষও প্রকাশ পায়। এরপর বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ড. মোমেন তার পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও তার শুক্রবারের (১৩ ডিসেম্বর) নির্ধারিত মেঘালয় সফর স্থগিত করেন।

অন্যদিকে, আসামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্বনির্ধারিত ভারত সফর শুক্রবার স্থগিত করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোও। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আবের বৈঠকের কর্মসূচি ছিল। বৈঠকের প্রস্তুতিও চলছিল আসামের গৌহাটিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফরটি স্থগিত করার খবর দেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার। ভারতেরই সংবাদমাধ্যম বলছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর বাতিলের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবের সফরও স্থগিত হয়ে পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে নয়াদিল্লির। এই উদ্বেগের মধ্যে বিশেষ বার্তা দিয়ে চাপ বাড়াল যুক্তরাষ্ট্রও।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *