মৃ’ত্যুর আগে দেশে ফেরার আকুতি জানান সৌদি প্রবাসী সাজনা

পরিবারের অভাব-অনটন মুছতে পরিবার ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান সাজনা বেগম। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি সৌদি যান। বিদেশে গিয়ে মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসের মা’থায় তার র’হস্যজনক মৃ’ত্যু হয়। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স কনকর্ড এপেক্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন সাজনার মৃ’ত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, ২৫ দিন সাজনার পরিবারে’র কাছে সংবাদটি গো’পন রাখে এজেন্সিটি।

জানা যায়, সাজনা বেগম হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজে’লার কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী। দরিদ্র পরিবারের অভাব ঘোচাতে নিকটাত্মীয় গো’লাপ মিয়ার প্রলো’ভনে সৌদি গমন করেন। রাজধানীর কনকর্ড এপেক্স নামের একটি দেশীয় রিক্রুটিং এজেন্সি তার সৌদি যাওয়ার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে। বিদেশে যাওয়ার পর প্রথম তিন মাস ভালোই চলছিল। এরপরই শুরু হয় ‘নি’র্যা’তন’।

তার স্বামী অভিযোগ করেন, ‘অসহনীয় নি’র্যা’তন কথা পরিবারকে জানায় সে। দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার মোবাইল ফোনে আকুতি জানায়। এক পর্যায়ে তাকে মে’রে ফেলার’ও আশ’ঙ্কাও ব্যক্ত করে।’ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দালাল গো’লাপ ও এজেন্সি কনকর্ড এপেক্সের জানানো হয়। নানা অজুহাতে সময়’ক্ষেপণ করে এজেন্সি কর্তৃপক্ষ ও দা’লাল। পরে এলাকায় সালিশ বসালে সাজনা বেগমকে আনতে সর্বশেষ দুই লাখ টাকায় সম্মত হয় কনকর্ড এপেক্সের হয়ে কাজ করা গো’লাপ।

গো’লাপের কথামতো সাজনার ভগ্নিপতি আলী আহম’দ নগদ টাকা দেন। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সাজনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয় কনকর্ড এপেক্স ও গো’লাপ মিয়া। কথার হেরফের হয়। নানা অজু’হাতে সময়ক্ষেপণ করে। করে টালবাহানা। পরে ২ আগস্ট সৌদি আরবে সাজনা বেগমের ‘র’হস্যজনক’ মৃ’ত্যু হয়।

বুক ভরা কষ্ট নিয়ে স্বামী মিজানুর রহমান বলেন, ‘গবাদি পশু বিক্রি করে স্ত্রী’কে দেশে ফেরানোর জন্য টাকা দেই। কিন্তু এ’জেন্সি নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। আমা’র স্ত্রী’ সাজনার সৌদিতে র’হস্যজনক মৃ’ত্যু হয়েছে। আম’রা জেনেছি, তবে বিষয়টি আমাদের কাছে গো’পন করে কনকর্ড এপেক্স। অন্য আরেকটি মাধ্যমে আমি আমা’র স্ত্রী’র মৃ’ত্যুর খবর পাই। জীবিত স্ত্রী’কে ফিরিয়ে আনার জন্য শতচেষ্টা করেও পারলাম না।’ তিনি এ ঘটনার বিচার দাবি করেন।

এসব বিষয়ে জানতে গো’লাপকে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নেটওয়ার্কের বাইরে আছি। পরে ফোন দিয়েন।’ এরপর বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

এ বিষয়ে মেসার্স কনকর্ড এপেক্সের স্বত্বাধিকারী আবুল হোসেন সাজনার মৃ’ত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘আম’রা যতদূর জানতে পেরেছি, রাতে ঘুমানোর পর সকালে মৃ’ত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। স্বাভাবিকভাবেই মৃ’ত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সৌদি পু’লিশ এ ঘটনার ত’দন্ত করছে এবং সাজনার লা’শ ময়নাত’দন্তের জন্য দেশে আসতে দেরি হচ্ছে। ময়নাত’দন্তের পর এলে বিস্তারিত বলা যাবে কী’ভাবে মৃ’ত্যু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা লা’শ দ্রুত দেশে পাঠানোর জন্য চেষ্টা করছে। সেখানে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমিও প্রতিনিয়ত দূতাবাসের কর্মক’র্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

তবে এজেন্সির পক্ষ থেকে ২৫ দিন ধরে সাজনার পরিবারকে মৃ’ত্যু’র খবর না জানানোর বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। আবুল হোসেন আরও বলেন, ‘আম’রা তাকে ফেরানোর জন্য দুই লাখ টাকা নিইনি। এসব বিষয়ে গো’লাপ ভালো বলতে পারে। তাছাড়া মৃ’ত্যু’র পর সাজনার পরিবারকে জানানো হয়েছে।’

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *