যে কারণে অধ্যাপনা ছেড়ে রাজনীতিতে শেখ পরশ !!
ক্যাসিনোকাণ্ডে গত ২০ অক্টোবর যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এক মাস পর অবশেষে সম্পন্ন হলো যুবলীগের বহু আকাঙ্ক্ষিত সপ্তম কংগ্রেস।
শীর্ষ নেতৃত্বের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ভাবমূর্তির সংকটে পড়া সংগঠনটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন এর প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। ক্লিন ইমেজের অধিকারী শেখ পরশ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। শিক্ষকতা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন এতদিন।
জানা গেছে, ভাবমূর্তির সঙ্কটে থাকা যুবলীগকে পুনর্গঠনে ফুপু শেখ হাসিনার নির্দেশে শেখ পরশ রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তবে, প্রথমদিকে তিনি অনেকটাই দ্বিধায় ছিলেন সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নিয়ে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হলেও অনেকটা অভিমান থেকেই কিনা রাজনীতিতে সক্রিয় হননি শেখ পরশ। ছোটবেলাতেই রাজনৈতিক কারণে বাবা-মা’কে হারিয়েছিলেন তিনি। যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা শেখ পরশের মনে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি করেছিল। এমনকি ছোটভাই তাপসের নির্বাচনী প্রচারেও তাকে খুব একটা নামতে দেখা যায়নি।
সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন এমন গুঞ্জন ওঠে। সম্মেলন প্রস্তুতির জন্য যুবলীগের যে কমিটি হয়েছে তাতে আকস্মিকভাবে পরশের যুক্ত হওয়া দেখে গুঞ্জনের পালে আরও হাওয়া লাগে।
সম্মেলন প্রস্তুতি দেখতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুক্রবার যখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়েছিলেন তখন তার সঙ্গে শেখ পরশ ছিলেন। গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির উত্তরাধিকারীকে নেতৃত্বে পাওয়ার অধিকার যুবলীগের আছে। এরপর, শেখ পরশের নেতৃত্বে আসার বিষয়টা ওপেন সিক্রেট হয়ে যায়।
পরশের ভাই শেখ ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। তাদের চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনিও যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন।
পঁচাত্তর ট্রাজেডিতে বাবা-মাকে হারানো পরশ ধানমণ্ডি সরকারি বালক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেয়ার পর দেশে ফিরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসছিলেন তিনি।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে যুবলীগের সপ্তম সম্মেলন শুরু হয়। বিকাল ৪টার দিকে যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে শেখ ফজলে শামস পরশের নাম ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণাটি দেন।
সম্মেলন স্থলে সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে সকাল ১০টার পর ভাই শেখ ফজলে নূর তাপস ও চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সঙ্গে সমাবেশ স্থলে আসেন পরশ। ঝাঁকড়া চুলের দীর্ঘদেহী মানুষটি যখন মূল মঞ্চের দিকে যেতে থাকেন তখন জাতীয় নেতারা তাকে অভিনন্দন জানান।
তিনি মূল মঞ্চে উঠেই সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে প্রথম সারির পাঁচটি চেয়ারের একটিতে বসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডান পাশের এক চেয়ার পরেই বসেছেন পরশ। যখন পরশ মঞ্চের দিকে আসেন তখন নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এমন অনেকেই বলতে থাকেন যুবলীগের আগামী চেয়ারম্যান এসে গেছেন। মঞ্চে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে দেখা যায় পরশকে নিয়ে মঞ্চের সামনে বসে থাকা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কিছু বলছেন। শেষ পর্যন্ত পরশই হলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।
যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমি যুবলীগের সভাপতি হিসেবে নয়, যুবলীগের একজন কর্মী হিসেবে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করব। আমার চেষ্টা থাকবে যুব সমাজ যেন- আই হেটস পলিটিসক থেকে বেরিয়ে এসে জয়বাংলা, জয়বঙ্গবন্ধু বলে দেশের কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখে’ বলেন পরশ।
বক্তব্যের শুরুতে পরশ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসাকে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদ, ১৫ আগষ্টে নিহতদের, জাতীয় চার নেতা এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে নিহত যুবলীগ নেতাদের স্মরণ করেন।
রাজনীতি থেকে দূরে থাকার কারণ তুলে ধরে যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান বলেন, “যে মানুষ জাতির জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে, তাকে যখন এমন নির্মমভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করতে পারল, আশাহত হওয়াটাই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ এবং তার কন্যার দেশের প্রতি উদার ভালবাসা থেকে আমি সাহস পাই।’
‘তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে দায়িত্বগুলো পালন করব। যুবলীগের একজন সভাপতি হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। আপনারা আমার শক্তি হবেন, আমাদের শক্তি হবেন। ”
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা মনি বঙ্গবন্ধুর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই সংগঠন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর পর দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তা প্রতিহত করার জন্যই এই সংগঠন কাজ করেছে।’
পরশ তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘তিনি বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ শহীদের রক্ত দিয়ে তৈরি একটি অনুভূতির নাম। আমি একজন শহীদের সন্তান। ছোট বেলায় আমি এবং আমার ভাই শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছ থেকে রাজনীতি অনেক কিছু বলতে গেলে সবকিছুই নিয়েছে। আমরা ছোটবেলায় হারিয়েছি আমার মা-বাবাসহ অন্যান্য স্বজন। আমাদের দুঃখ শুধু বঙ্গবন্ধু কন্যাদ্বয় শেখ রেহেনা এবং প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা উনারা অনুধাবন করতে পারেন।’
সূত্রঃ বিডি২৪ রিপোর্ট